বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫

পাশান পুরের পাশাণি


আজ তোমাদের এক পাশাণ পুরের পাশাণ পুরির গল্প শোনাবো।
দাদু পাশাণ পুর কোথায়?
বুকের ভিতর একটা হৃদয় থাকে,আর সেই হৃদয়ের ভিতরেই থাকে পাশাণ পুর।
দাদু তাহলে পাশাণ পুরি কে?
পাশাণ পুরি হচ্ছে পাশাণ পুরের রাণী।
দাদু রাণীর নাম কি?
জানতো দাদুরা রাণিরা এমনিতেই সুন্দরী হয়।
পাষাণ পুরের রাণী তার চেয়েও অনেক সুন্দরী ছিল।
তার নামটা তার মতোই সুন্দর।
ছন্দা বিরক্ত বোধ নিয়ে আবার বলল দাদু রাণীর নামটা তো বলবে?
ছন্দার সাথে তাল মিলিয়ে নিলিমা, জান্নাত, শাওন, রকি, ফাহিম, রাব্বি, রাফি, রায়হান সহ সব গুলি চিৎকার দিয়ে বলল
দাদু তারাতারী রাণীর নামটা বলোনা?
কয়েক মুহূর্ত নিরব থেকে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম "সুরঞ্জনা"।
বাচ্চাগুলি জানিনা কি বোঝে চিল্লাচেচামেচি করে একসাথে বলে
উঠলো সুরঞ্জনা সুরঞ্জনা সুরঞ্জানা।
আমিও কেনো জানি নিরব নিথর হয়েই বসে আছি।
একটুও বিরক্ত হচ্ছিনা ওদের চিল্লাচেচামেচিতে।
অজানা কোন এক শক্তি যেনো আমার বাকশক্তি রুদ করেছে।
আমি কোন কথা বলতে পারছিনা।
ধমকের শুরে বলতে পারছিনা এই তোরা থামবি এবার।
ছাদের সিঁড়ি ঘরের দরজা খুলে বড় বউমা ছাদে এসেই চিৎকার দিয়ে বললো
ঐ তোরা থামলি নাকী আমি......
এবার ছাদটা নিরব হয়ে গেল।
নিরব হয়ে গেল আমার দাদু গুলি আর আমার ভাঙ্গল নিরবতা।
আমার বড় বউ মাকে আমার নাতি নাতনিরা খুব ভয় পায়।
যদিও কখনো বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলেনা।
আমিও কিন্তু বড় বউমাকে একটু একটু ভয় পাই।
যদিও কাউকে বোঝতে দেইনা।
পর পর করে আরো তিন ছেলের বউ ও চার ছেলে ছাদে চলে এলো।
মেঝ বউমা বাচ্চাদের ধমকের সুরে বললো এই তোরা এতো চিল্লাচেচামাচি করছিস কেন?
জান্নাত কোন সময় ব্যয় না করেই বলে উঠলো জানো মেঝমা দাদুনা আমাদেরকে
পাশাণ পুরের পাশান পুরির গল্প শোনাচ্ছে।
কি যেনো পাশান পুরের পাশাণি রাণীর নাম ভুলে গেছি?
বলতে না বলতেই আমি জান্নাতের মুখে টিপ দিয়ে ধরলাম।
কিন্তু কাজ হলোনা।
সব গুলি সেই আগের মতোই চিৎকার দিয়ে বললো সুরঞ্জনা সুরঞ্জনা সুরঞ্জনা।
(২)
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নুয়ে বসে রইলাম।
বড় বউমা বললো এই তোরা কিন্তু আর চিল্লাচেচামেচি করবিনা।
দাদুর সাথে গল্প শোনবি শুধু।
ছোট বউমা বললো চলেন ভাইয়া, ভাবি আমরা নিচে যাই।
ছেলে,ছেলের বউরা চলো চলো বলে সবাই সিডির দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিচে চলে গেল।
আমিও হাপ ছেড়ে বাচলাম।
এবার রাব্বি বলতো দাদু পাশাণ পুরির গল্পটা বলো এখন।
সব গুলি আবার এক সাথে চিৎকার দিতে গেল।
আমি দুই ঠোঁটের মাঝে তর্জনী আঙ্গুল রেখে বললাম বড় মা আবার চলে আসবে।
সব গুলি চুপসে গেল।
রকি কানে কানে বললো দাদু বলনা এখন।
হ্যা বলছি বলে আবার শুরু করলাম।
পাশাণ পুরির রাণীর প্রেমিকের নাম ছিল প্রেমিক মাতাল।
সব গুলি একসাথে হে হে করে হেসে উঠলো।
আমি বললাম এই তোরা হাসলি কেন?
রাফি বলল দাদু প্রেমিক মাতাল আবার নাম হয় নাকী।
রায়হান বলল দাদু এটা আবার কেমন নাম।
ছন্দা কিছু বলতে যাচ্ছিল,আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম প্রেমিক মাতাল
হচ্ছে পাশাণ পুরের পাশাণী রাণীর দেওয়া নাম।
তবে প্রেমিক মাতালের ভাল একটা নামও কিন্তু আছে।
জান্নাত বললো ভালো নামটা কি দাদু বলনা?
আমি বললাম এখন যেহেতু পাশাণ পুরির পাশাণীর গল্প বলছি,
সেহেতু প্রেমিক মাতাল নামেই আমি গল্পটা শেষ করবো
গল্পের শেষে তোমাদের প্রেমিক মাতালের নাম বলবো।
প্রেমিক মাতালের ভাল নাম আমার বলা লাগবে না,
তোমরাই তখন বুদ্ধি খাটিয়ে জেনে নিতে পারবে।
সবগুলি এক সাথে হাত তালি দিয়ে উঠলো।
আমি আবার দুই ঠোঁটের মাঝে তর্জনী আঙ্গুল রেখে বড় বউমার ভয় দেখালাম।
তাই হাততালি বন্ধ হয়ে গেলো।
জান্নাত ফিস ফিস করে বললো দাদু তুমি তারাতারী গল্পটা বলো
আমি প্রেমিক মাতালের ভাল নাম সবার আগে বলতে পারবো।
ছন্দা ও একী কথা বললো আমি প্রেমিক মাতালের ভাল নাম সবার আগে বলতে পারবো।
সব গুলি আবার এক সাথে চিৎকার দিয়ে বলতে যাচ্ছিল, আমি আগের মতোই থামিয়ে দিলাম।
(৩)
আমি আবার গল্প বলতে লাগলাম।
সুরঞ্জনা ছিল ঢাকার মেয়ে আর প্রেমিক মাতাল সিলেটের।
সুরঞ্জনা তার ভাবির চাকরির সুবাদেই সিলেটে বেড়াতে এসেছিল।
আর প্রেমিক মাতাল ছিল সুরঞ্জনার ভাবির আফিস এলাকার ছেলে।
খুব চঞ্চল আর ফাজিল ও ছিল।
সেই অফিসের সবার সাথে প্রেমিক মাতালের খুব সু-সম্পর্ক ছিল।
প্রতিদিন অসংখ্য বার প্রেমিক মাতাল সেই অফিসে যাওয়া আসা করতো।
সুরঞ্জনার ভাবি থাকতেন অফিসের পাশেই মহিলা হোস্টেলের একটি রুমে।
সুরঞ্জনা সিলেটে বেড়াতে এসে তার ভাবির সাথেই থাকতো।
প্রেমিক মাতাল সেই মহিলা হোস্টেলেও বিনা পারমিশনে যাওয়া আসা করতে পারতো।
আর এই যাওয়া আসা করেই সুরঞ্জনার সাথে প্রেমিক মাতালের পরিচয়।
এক সময় পরিচয় থেকে হালকা প্রেম ভালবাসা জন্মায় দুজনার মনে।
কদিন আগেই দুজন দুজনার সাথে স্বাভাবিক কথা বলতো।
কিন্তু কয়েক দিন ধরে দু-জন, দু-জনকে দেখলে কেমন যেন লজ্জা বোধ করতো।
আর সেই লজ্জা বোধটাই তাদেরকে তাদের ভালবাসার জানান দিল।
হয়ে গেল দুজন প্রেমিক যোগল।
প্রেমিক মাতাল সুরঞ্জনার কাছ থেকে তার ভাবির মোবাইল নাম্বারটা খুজে নিতে লজ্জা পাচ্ছিল।
তাই শত কৌশলে ভাবির মোবাইল নাম্বারটা সংগ্রহ করে নিলো।
শুরু হলো প্রেমিক মাতালের আর সুরঞ্জনার প্রেম কাহিনি।
একদিন সুরঞ্জনা মোবাইলে প্রেমিক মাতালকে বললো, আমি হটাত একদিন তোমাকে না বলে ঢাকা চলে যাবো।
তখন তুমি আমাকে কোথায় খুজে পাবে?
প্রেমিক মাতাল বললো আমার মনের জোরেই তোমাকে খুজে নেবে।
সুরঞ্জনা বললো দেখবনে কি ভাবে আপনি আপনার মনের জোরে আমাকে খুজে নেয়।
প্রেমিক মাতাল ও বললো দেখ ঠিকি খুজে নিব।
সকালে চা নাস্তা সেরে প্রেমিক মাতাল সুরঞ্জনার ভাবির অফিসের দিকে রওয়ানা দিলো।
হাসান অর্থাৎ প্রেমিক মাতাল আর সুরঞ্জনা পিয়ন দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বললো ভাই ভাই
সুরঞ্জনা আপু তো চলে গেছেন।
প্রেমিক মাতাল পুরোপুরি ঠিক না বুঝতে পেরে আবার জিজ্ঞেস করলো, কে কোথায় গেছে?
হাসান আবার বললো সুরঞ্জনা আপু ঢাকা চলে গেছেন
প্রেমিক মাতালের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
বুকের ভিতর কেমন যেন একটা ব্যথা মুচড় দিল।
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রেমিক মাতাল অফিসের দিকে না গিয়ে অনেক গুলি সিগারেট সাথে নিয়ে
পাহাড়ের অর্থাৎ চা বাগানের দিকে চলে গেল।
কয়েক দিনে প্রেমিক মাতাল অনেক পাল্টে গেলো।
সেই চঞ্জল ছেলেটা নম্র ভদ্র হয়ে গেল।
ভুলে গেল ফাজলামি, আর মেয়েদের কে টিচ করা।
অকারনে কোন কথা বলে না কারো সাথে।
অধিকাংশ্য সময় একা একা কাটায়। হয়তো পাহাড়ের উপর নয়তো বনে জঙ্গলে।
পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরে।
প্রেমিক মাতালের মা বোন বন্ধু বান্ধব কেই-ই নিজেদেরকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না
যে এই প্রেমিক মাতাল সেই প্রেমিক মাতাল।
সবাই খুজ নিয়ে জানতে পারলেন প্রেমিক মাতালের বধলে যাওয়ার আসল কারণ।
তাতে কেউ-ই অখুশিনা।বরং সবাই খুসি-ই।শুধু কয়েক জন বন্ধু বাদে।
চলতে থাকলো দিন এই ভাবেই।
হটাত একদিন আছরের নামাজ পড়ে প্রেমিক মাতাল মসজিদের বাহিরে আসতেই
পকেটের মোবাইলটা বেজে উঠলো।
অচেনা একটা মোবাইল নাম্বার থেকে কল এসেছে।
প্রেমিক মাতাল কলটা রিসিভড করতে গিয়ে কেন জানি তার শরিরটা কাপছে।
কাপতে কাপতে কাপতে কল রিসিভড করে বললো হ্যালো।
ওপাশ থেকে হ্যালো বলা মাত্রই লাইনটা কেটে গেল।
প্রেমিক মাতাল শুধু কোন রকম হ্যালো শুনেই বুঝে গেল কে কল করেছিল?
ছন্দা সাথে সাথে বলে উঠলো আমিও বুঝে গেছি কে কল করেছিল?
জান্নাত ও বলতে যাবে এমন সময় সব গুলি একসাথে চিৎকার দিয়ে বললো, সুরঞ্জনা সুরঞ্জনা সুরঞ্জনা।
আমি আবার আঙ্গুলের ইশারায় সবগুলিকে থামিয়ে দিলাম বড় বউ মার ইঙ্গিত দিয়ে।
আমার দাদু গুলি আবারো চুপসে গেলো।
বাব্বি বলবো তারপর কি হলো দাদু।
তারপর প্রেমিক মাতাল খুশিতে আত্বহারা হয়ে তার বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল।
সে বুঝতে পারলো না এখন কি করবে?
তার শরিরটা খুব কাপছিল।
আবার মোবাইলটা বেজে উঠলো।সেই আগের নাম্বারেই কল আসলো আবার।
প্রেমিক মাতাল কাপতে কাপতে মোবাইলটা রিসিভড করে ভাঙ্গা গলায় বললো হ্যালো,কেমন আছো খুকি।
এই প্রথম প্রেমিক মাতাল সুরঞ্জনাকে তুমি করে বললো।
ওপাশ থেকে সুরঞ্জনা বললো হ্যা ভালো। কই আপনার মনের জোর।আমায় খুজে নিতে তো পারলেন না।
প্রেমিক মাতাল বললো এই যে আমার মনের জোরই আজ তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসলো।
বাচ্ছা গুলি এক সাথে হাততালি দিয়ে উঠলো।
আমি আবার ও ইশারায় থামিয়ে দিলাম।
রাফি বললো তারপর কি হলো দাদু?
আমি বললাম তারপর এভাবে চলতে থাকলো প্রেমিক মাতাল আর সুরঞ্জনার প্রেম কাহিনি।
প্রেমিক মাতাল জীবনের প্রথমবার ঢাকা গেলো সুরঞ্জনার সাথে দেখা করতে প্রথম রোজাতেই।
সেহেরি খেয়ে,ফজরের নামাজ আদায় করেই মা’কে ভূলবাল বুঝিয়ে চলে গেল ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে।
দুজন দেখা করলো সায়দাবাদ অয়ান্ডা লেন্ড পার্কে।
ছন্দা বলো দাদু পার্কটা বুঝি অনেক সুন্দর।
আমিও বললাম না দাদু ছোট একটা পার্ক।অল্প জায়গায় অল্প কিছু রাইডার।
রাফি আবার বললো তারপর দাদু।
আমি বললাম তারপর প্রতি মাসে দু একবার ঢাকা যেত
প্রেমিক মাতাল সুরঞ্জনার সাথে দেখা করতে।
ওরা ৬ বছরের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে ।
ছন্দা জানতে চাইলো দাদু ওরা কোথায় কোথায় বেড়াতো?
আমি বললাম, রমনা পার্ক, জাদুগর, চারুকলা, টি.এস.সি মোড়, জিয়া উদ্যান,
সংসদ ভবন, বোটানিকেল উদ্যান, চিরিয়াখানা, স্মৃতিসৌধ, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল,
সদর ঘাট, পোস্তগোলা ব্রিজ, শ্যামপুর ঘাট, পাগলা বাজার মেরি এন্ডারসন ভাসমান রেস্তোরা ও পার্ক,
বসুন্ধরা রিভার ভিউ প্রজেক্ট, সোনারগাঁ জাদুগর সহ অনেক জায়গায়।
ছন্দা মাথায় হাত দিয়ে বললো দাদু এতো জায়গায় ঘুরে বেড়াতো।
আমি বললাম হ্যা দাদু।
(৪)
নীলিমা জিজ্ঞেস করলো দাদু ৬ বছর কেনো দাদু।
আর কি ওরা ঘুরে বেড়ায়নি?
আমি বললাম ওদের সম্পর্কটা ৬ বছর-ই স্থায়ী ছিলো যে।
৫জুন সুরঞ্জনার জন্মদিনের দিন ওদের সম্পর্কের ইতি ঘটে।
জান্নাত প্রশ্ন করলো ওদের সম্পর্কটা ভাংলো কি করে দাদু?
আমি আবার বলতে লাগলাম,তোমরা ছোট মানুষ সেটা তোমরা নাইবা জানলে আজ।
জান্নাত আবার বললো কিন্তু দাদু.....................
আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম কোন কিন্তু নয় দাদু।
আর যদি জানার খুব ইচ্ছা থাকে তবে বড় হয়ে মা বার কাছ থেকে জেনে নিও।
রাফি বললো দাদু আব্বু আম্মুও কি “পাষাণ পুড়ের পাষাণীর গল্পটা জানেন।
আমি বললাম হ্যাঁ জানে।
রকি বললো তারপর কি অদের কি হলো দাদু?
আমি আবার বলতে লাগলাম,ওদের সম্পর্ক বিচ্ছেদের প্রায় দের বছর পর
প্রেমিক মাতাল ঢাকা গিয়ে জানতে পারে সুরঞ্জনা বিয়ে করেছে।
এখন সে প্রেগনেট।
জান্নাত কি বুঝে না বুঝে বলে উঠলো ইয়া মাবুদ।
আমি বিস্মিত চোখে ওর দিকে তাকালাম।
দেখলাম ওর চোখের কোনে আশ্রু জমে ছলছল করছে।
জান্নাত বললো তারপর কি হলো দাদু?
তারপর প্রেমিক মাতাল স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেলো।
ভুলে গেলো আপন জীবন কে ভালবাসতে।
প্রেমিক মাতালের মা-ই ছিলেন প্রেমিক মাতালের একমাত্র পৃথিবী।
তিনিও একদিন চলে গেলেন তাকে ছেড়ে।
বাবা সেই শৈশবেই চলে গিয়ে ছিলেন।
রাফি বললো তাহলে তো দাদু প্রেমিক মাতাল একেবারেই একা হয়ে গেলো।
কেউ আর রইলোনা তার।
আমি বললাম, তা না ,ওর দুইটা বোন ছিলো।খুব ভালো ঘরেই বিয়ে হয়েছে।
কিন্তু প্রেমিক মাতালের মা যখন ওকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে যান,তখন সে ওর জন্য রেখে যাওয়া
মায়ের জায়গা জমি বিক্রি করে অন্যথায় চলে যায়।
তাই আর ভাই বোনের কোন দেখা শুনা হয়নি।
জান্নাত বললো দাদু প্রেমিক মাতাল কি আর বিয়ে করেনি?
আমি বললাম না দাদু সে আর বিয়ে করেনি।
নতুন জায়গায় যাওয়ার পর ৫ জুন তারিখে প্রেমিক মাতাল দেখলো
একটা ছোট্ট ছেলে শিশু রাস্থায় বসে কান্না কাটি করছে।
শিশুটাকে দেখে প্রেমিক মাতালের মায়া হলো
নিয়ে আসলো তার সাথে।
বছর খানিক লালন পালন করলো মা বাবার মতো আদর স্নেহ করে।
ঠিক এই ভাবে প্রতি বছর ৫জুন এতিমখানা বা রাস্থায় কুরিয়ে কুরিয়ে একজন একজন করে
সাত জন ছেলে মেয়ে নিয়ে আসলো।
তিন জন ছেলে আর চার জন মেয়ে।
তারপর বদলে গেলো আবার প্রেমিক মাতালের জীবনের গল্প।
এখন প্রেমিক মাতালের পরিবারের সদস্য অনেক।
সব ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিছে।
অনেক গুলি মিষ্টি নাতি নাতনি আছে প্রেমিক মাতালের।
(৫)
জান্নাত বললো দাদু আমি মনে হয় প্রেমিক মাতালকে চিনতে পেরেছি।
আমি মুচকি হাঁসি দিয়ে বললাম কি ভাবে চিনলে দাদু?
জান্নাত খুব উৎসুক হয়ে বললো, সুরঞ্জনার জন্মদিন ৫জুন,মানে আজ রাত বারোটার পর।
আমি বললাম হ্যা।
জান্নাত বললো তার মানে আজ কেক কেটে সুরঞ্জনা ও প্রেমিক মাতালের ছেলে মেয়ের জন্মদিন পালন হবে।
কারণ কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে মেয়েদের সঠিক জন্ম তারিখ জানা থাকে না।
যেহেতু ৫জুন কুড়িয়ে আনা হয়েছে, সেহেতু ৫জুন ই ওদের জন্মদিন পালন হয়।
আমি বিস্মিত চোখে ছোট্ট জান্নাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম হ্যা দাদু।
জান্নাত রাফিকে কানে কানে কি বলে যেন নিচে পাটিয়ে দিল।
আমি সেদিকে তেমন একটা খেয়াল করলাম না।
জান্নাত বললো, নিশ্চয়ই প্রেমিক মাতাল এখন নাতি নাতনির সাথে ছাদে বসে গল্প করছে।
আর ছেলে মেয়েদের জন্মদিনের কেক নিয়ে ছাদে আসার অপেক্ষা করছে।
আমি হ্যা সূচক উত্তর দিলাম।
জান্নাত তার হাতের ঘরির দিকে তাকিয়ে,তারপর আমার সব গুলি নাতি নাতনির মুখের দিকে থাকিয়ে
ঘোসনা স্বরূপ বললো আমার প্রিয় ভাই বোনেরা আর দুই মিনিট পরেই আমরা আমাদের প্রেমিক মাতালকে
চিনতে পারবো।
নানি নাতনি গুলি একেক জন একেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো কে কে প্রেমিক মাতাল।
কে প্রেমিক মাতাল।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি জান্নাতের দিকে।
জান্নাতের চোখ জোরা যেন পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলো ছড়াচ্ছে।
ঠোট জোরাতে বিজয়ের হাঁসি।
সবাই ফিসফাস করলেও জান্নাত নিরবে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে।
হটাত ছাদের গেইট খোলার শব্দে সব গুলি নাতি নাতনি চুপ হয়ে গেলো।
দ্যান ভাংলো আমার আর জান্নাতের।
আমার ছেলে মেয়ে ও ছেলের বউ,মেয়ের জামাইরা জন্মদিনের কেক হাতে নিয়ে আমার কাছে আসলো।
ছোট মেয়ের জামাই আমার সামনে টি টেবিল খানা রেখে,তার উপর কেকটা রাখলো।
আমি টেবিলের একপাশে আর আমার নাতি নাতনি ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ছেলের বউরা অন্য পাশে।
আমি সবার দিকে থাকিয়ে দেখি জান্নাত সবার কানে কানে কি বলছে।
আমি জান্নাত কে ডেকে আমার পাশে আনলাম।
বললাম দাদু তুমি এতক্ষন সবার কানে কানে কি বলছিলে?
জান্নাত বললো তাতো দাদু তোমাকে বলা যাবেনা।
আমি ওহ বলে কেকের দিকে থাকিয়ে দেখি কেকের উপর শুধু
“HAPPY BARTHDAY TO YOU SURONJONA”লিখা।
যেখানে প্রতিবার আমার সাত ছেলে মেয়ের নাম লিখা থাকে।
আমার বুঝতে বাকী রইলোনা এটা জান্নাতের প্লান।
রাফিকে তাই নিচে পাঠিয়েছিল বড় বউ মাকে বলার জন্য।
কারণ কেকটা বড় বউ মা নিজের হাতে বানাচ্ছিল তখন।
আমি আর কিছু বললামনা লজ্জা বোধ করে।
আমি জান্নাত কে-ই কেক কাটার জন্য বললাম। সবাই ও আমার সাথে তাল মিলিয়ে
একী কথা বললো।
আমি আরেকটি কথা সবাইকে আবার জানিয়ে দিলাম,
আজ কিন্তু শুধু সুরঞ্জনার জন্মদিন নয়, আমার থেকে চলে যাওয়ার দিনও।
তাই আমি আজ রাতে এখানেই অর্থাৎ ছাদে একা থাকতে চাই।
আশা করি কেউ আমাকে বাধা বা ডিস্টাব করবেনা।
জান্নাত ও রাজী হলো।
জান্নাত ঘোসনা দেওয়ার মতো করে বললো, প্রিয় ভাই বোন প্রেমিক মাতাল কে কে চিনতে পেরেছো?
সব গুলি নাতি নাতনি একসাথে বলে উঠলো আমি আমি আমি।
জান্নাত এবার সবার কাছে জানতে চাইলো কে?
বলা মাত্রই সবাই চিৎকার নিয়ে বলতে লাগলো দাদু দাদু দাদু।
আমি ছেলে মেয়েদের সামনে লজ্জায় কিছুটা মাথা নিছু করে ফেললাম।
জান্নাত আবার বললো, আজ সুরঞ্জনার জন্মদিন। কিন্তু সুরঞ্জনা আমাদের মাঝে উপস্থিত নেই।
তাই আজকের জন্য আমি সুরঞ্জনা হয়ে, সুরঞ্জনার জন্মদিনের কেক কাটতে চাই,যদি দাদু অনুমতি দেন।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়ে জান্নাত কে কোলে নিয়ে ওর হাত ধরে কেক কাটতেই
সবাই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো :HAPPY BARTHDAY TO YOU SURONJONA”.
.........................................................সমাপ্তি..................................................................

কোন মন্তব্য নেই: