রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪

রাতের আঁধারের নন্দিনী (৩য় পর্ব)


       আমরা দু জন রওয়ানা দিলাম।
       গাড়ি দুই ঘন্ডা চলার পড়ে আমার ঘুম চইল্লা আইলো। আমি ঘুমাইয়া গেলাম।
       বলেই মনিরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
       মনির চার ফ্লাক্সে কনুই ঠেকিয়ে দিয়ে থুতনিতে হাত রেখে মনিরার মুখের দিকে তাকিয়ে

       কথা শুনছিলো। মনিরা থেমে যাওয়ায় মনিরের ধ্যান ভেঙ্গে গেলো।
       মনির বললো, কি হলো থাইম্মা গেলেন কেন?
       মনিরাঃ আরেকটা চা খাওয়াইন।
       মনিরঃ চা তো মনে হয় ঠান্ডা হইয়া গেছে।
       মনিরাঃ সমস্যা নাই দেন।
       মনির চা বানাতে বানাতে বললো তারপর কি হইলো কন?
       মনিরাঃ কইতাছি খারান। আগে পানি খাওয়ান। তার পর চাডা দেন?
       গলাডা ভিজাইয়া লই। শুকাইয়া কাষ্ট হইয়া গেছে।
       মনির চা বানিয়ে মনিরার হাতে দিয়ে গ্লাসে পানি নিলো।
       তার পর মনিরা তার হাতের চা টা মনিরের হাতে দিয়ে মনিরের হাত থেকে
       পানির গ্লাসটা নিয়ে একটানে গিলে ফেললো। নিজ হাতে আরেক গ্লাস পানি নিয়ে
       আবার একটানে খেয়ে নিলো।
       এই বার চাডা দেন।
       মনির চা দিতে গেলে মনিরার হাত মনিরের হাতে একটু ছোয়া লাগে।
       মনির কাপটা দ্রুত দিয়েই হাতটা সার্টে মুছে নিলো।
       মনিরা হাহাহা করে জোরে জোরে হাসি দিয়া বললো, আমি বেশ্যা বইল্লা
       হাতডা মুইচ্ছা নিলেন তাই না।
       মনির কিছু না বলে নিচের দিকে মাথা নামিয়ে রাখলো।
       মনিরা বললো, কি কথা কননা কেন?
       মনির কথা গুরিয়ে দিয়ে বললো তার পর কি হলো কন?
       মনিরাঃ তার পর আর কি হইবো,
       বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো আমাগো গাড়ী এক্সিডেন্ট করলো।
       তিন দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। আমি দেখলাম আমি মেডিকেলের বিছানায় শুইয়া আছি।
       তখনি আমার মনে পইড়া গেলো আমাগো গাড়ী এক্সিডেন্ট করছিল।
       আমি মেডিকেলের খাট থাইক্কা নাইম্মা আপারে পাগলের মতো খুজতে লাগলাম।
       কোত্তাও আপারে খুইজ্জা পাইলাম না। একজন নার্স কে জিগাইলাম সিমা আপা কই?
       নার্স কইলো সিমা কে? ও আইচ্ছা আপনি গাড়ী এক্সিডেন্ট এর রোগী।
       আমি কইলাম হ।
       নার্স কইলো সিমা নামে ঐ গাড়িতে কোন রোগী আছিল না। তয় এক জন রোগীর নাম পরিচয় পাওয়া যায় নাই।
       আমি কইলাম কই সে?
       নার্স মাথা নিচা কইরা আব্রাগোর মতো তুতলায়া কইলো, উনি নাই।
       আমার সরিলডা কাইপ্পা উঠলো। আমি কাইনডা দিয়া কইলাম কই গেছে?
       নার্স কইলো আজ সকালে সে মারা গেছে।
       আমি চিক্কুর দিয়া কাইনদা কইলাম আমার আপা কই আমারে আপার কাছে নিয়া যান?
       নার্স আমারে লাশের ঘরে নিয়া গেল। একটা লাশ সাদা চাদ্দর দিয়া ডাকা আছিলো।
       নার্স চাদ্দর সরায়া লাশের মুখ দেখাতেই আমি চিক্কুর দিয়া কান্তে লাগলাম।
       নার্স আমারে সান্তনা দিলো। আফিসে নিয়া আমার ব্যাগ আপার ব্যাগ,আর আফার মোবাইলডা আমায় বুঝাইয়া দিলো।
       আপার মোবাইলডা ভাইঙ্গা গেছিলো।
       তার পর আমারে কইলো আমার লগে আহেন। আমারে আড়ালে নিয়া তার কমরে বাধা একটা পুতলা বাইর কইরা
       দিয়া কইলো, এইডা আপনার বুকের মাঝে আছিল। আমি দেইকখা লুকায়া রাখছিলাম। কাওরে কইনাই।
       খুইল্লাও দেহিনাই। আপনি চেক কইরা দেহেন।
       আমি পুতলাটা হাতে নিয়া দেখলাম আমি যেই ভাবে রাখছিলাম সেই ভাবেই আছে।
       আমি নার্স কে কিছু কইতে পারলাম না রডের মতো সোজা হইয়া দারাইয়া রইলাম।
       নার্স যহন আমার চোউক্ষের পানি মুইচ্ছা দিতেছিলো তহন আমি নার্স বোকে জরাইয়া কান্তে লাগলাম
       বলেই মনিরা থেমে গেলো।
       মনিরঃ তার পর কি হইলো?
       মনিরাঃ তার পর আপার লাশ এম্বুলেন্সে কইরা আমাগো বাড়ী নিয়া গেলাম।
       মনিরঃ দাফন করলেন কই?
       মনিরাঃ আমার মায়ের পাশে?
       মনির চমকে গিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো, কি?
       মনিরাঃ আমার মাও ঐ দিন সকালে মইরা গেছিলো।
       মনিরা মনিরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মনিরের চোখে জল ঝরছে। তাই সে মনিরকে জিজ্ঞেস করলো,
       কান্তাছেন কেন?
       মনিরঃ আমার মায়েরও দুইডা কিডনি নষ্ট হইয়া গেছে।
       তাই আমিও আপনার মতো ঢাকা আইছি। আমিও যদি আমার মায়েরে
       বলেই কাদতে লাগল।
       মনিরা মনিরের মাথায় হাত দিয়ে সান্তনা দিয়ে বলতে গেলো আপনার মায়ের কিচ্ছু হবে না।
       মনির মনিরার হাতটা মাথা থেকে ঝাপটি দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো নিজের মায়েরে বাচাইতে পারলেন না।
       আপনার লাইগগাই আপনার মায় মইরা গেছে। আপনে যদি বেশ্যাগিরি না করতাইন তাইলে আপনার মায়
       মরতো না। আরো কয়ডা দিন বাইচ্ছা থাকতো।
       মনিরা মনিরের কোন কথার উত্তর দিতে পারলো না। শুধু নিরবে শুনে গেল।
       মনির বললো এখনো সময় আছে বিয়া শাদি কইরা ভালা হইয়া জান।
       মনিরা হুট করে বলে দিলো, আপনি আমার বিয়ে করবেন?
       মনিরের শরিরে বিদ্যুৎ চমকালো।
       তুতলাতে তুতলাতে বললো না কোন দিন না। আপনার মতো বেশ্যারে কোন দিন বিয়া করমু না।
       মনিরা হাসতে হাসতে বললো আপনার মতোই কেউ এই বেশ্যারে কোন দিন বিয়া করবো না।
       তাই মনিরারা ও আর ভালা হইতে পারবো না।
       হাহাহাহা করে হাসতে হাসতে মনিরা চলতে চলতে মনিরের চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
     
       রাতের আঁধারের নন্দিনী (১ম পর্ব)

       রাতের আঁধারের নন্দিনী (২য় অংশ)