রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

আজ ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো খুজবে সুরঞ্জনাকে


(১)
সকালে রাতের ডিউটি সেরে বাসায় ফিরছেন সুফিয়া বেগম। উনি সরকারী হাসপাতে চাকুরী করেন বিগত ২৪ বছর ধরে। সাধারন তো সকল হাসপাতাল গুলিতে তিন সিফটে ডিউটি হয়। সকাল বিকাল আর রাত। তিনি আজ রাতের ডিউটি সেরে বাসায় ফিরে উনার ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন নীড় কোথায় রে?
লাকিঃ ভাইয়া তো তুমি ডিউটি তে যাবার পর আসছি বলে বাহিরে গেল আর রাতে ফিরলনা।
মাঃ বলিশ কি? আমায় রাতে ফোন করে জানালিনা কেন?
লাকীঃ ভাইয়া যাওয়ার পর থেকে মোবাইলটা ও খুজে পাচ্ছিনা। পাশের বাসার ভাবির মোবাইল থেকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু বন্ধ পেলাম।
মাঃ আজ কয় তারিখরে লাকী?
লাকীঃ কেন মা আজ তো এপ্রিলের ১৪ তারিখ?

মাঃ কি সর্বনাশ। আজ তো পহেলা বৈশাখ। আমার একটুও মনে ছিলনা।
লাকীঃ মা তবে কি ভাইয়া এবারো প্রতিবারের মতো পালিয়েছে?
মাঃ হে তাছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা। তুই আমাকে মনে করিয়ে দিবিনা আজ পহেলা বৈশাখ। তবে তো আমি আজ ডিউটিতে যেতামনা। নীড়কে পাহারা দিয়ে রাখতাম।
লাকীঃ সরি মা আমার একটুও মনে ছিলনা। আর তুমি থাকলেই বা কি করতে ভাইয়া কি চালাক তুমি পারতে তাকে আটকে রাখতে? কই গতবার তো তুমি সারা রাত জেগে ভাইয়াকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছিলে। তারপর কি হলো তুমি যখন তাজুদের নামাজ পড়তে লাগলে তার মধ্যেই ভাইয়া তোমাকে ফাকি দিয়ে চলে গেল। বলেই লাকী অট্ট হাসি হাসতে লাগলো।
মা তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। লাকীর হাসিটা সাথে সাথে হার্ড ব্রেক ধরে থেমে গেল।
মা বললেন এবার কি করবো?
লাকীঃ কিচ্ছু করা লাগবে না মা। খালি খালি তুমি টেনশন নিচ্ছি। ভাইয়া তো আর বেকুব নয়। আমার ভাইয়া কত্ব চালাক। দেখবে কালকেই ভাইয়া ভালয় ভালয় চলে আসবে।
সুফিয়া বেগম লাকীকে ধমক দিয়ে বললেন হুম তোকে বলেছে ভালয় ভালয় আসবে?
লাকীঃ প্রতিবারই তো চলে আসে। কই কোন বার তো কোন ধরনের সমস্যা হয়নি।
লাকীকে আবারো যত জোরে সম্ভব ধমক দিয়ে বললেন। তোমার আর আমাকে জ্ঞান দিতে হবেনা। আমার জ্ঞান বুদ্ধি কমনা। আমার বোকা সোকা পাগল ছেলেটা ঘর থেকে পালিয়ে গেল আর আমি নাকী টেনশন করবোনা। এই জন্যই লোকে বলে তোদের মতো মেয়েদের মাথায় বুদ্ধি কম। বলেই সুফিয়া বেগন আয়নার দিকে নিজের ডিউটির ইউনিফর্ম চেঞ্জ করতে লাগলেন।
লাকীঃ মা তবে তো ছেলেদের মাতায় বুদ্ধি বেশী তাইনা। ভাইয়া তো আর তোমার মেয়ে না ছেলে। ভাইয়ার মাথায় অনেক বুদ্ধি। মা তুমিও তো মেয়ে তাইনা? বলেই চুপি চুপি হাসতে লাগলো লাকী।
মাঃ কি বললি আমি মেয়ে, আমি মেয়ে। আমি মেয়ে না গাদা আমি মহিলা। আমি দুই মেয়ের মা। ফাজিল কোথাকার। খালি পাকামু। একটা চর দিমু বলেই সুফিয়া বেগম তাকিয়ে দেখেন লাকী এখানে আর নেই।
সুফিয়া বেগম বুঝে গেছেন লাকী তাকে রাগিয়ে দিয়ে পালিয়েছে। তাই একা একাই লাকীকে বকতে লাগলেন বজ্জাজ মেয়ে কোথাকার মায়ের সাথে ফাজলামু করে। আমরা এই বয়সে মায়ের সাথে আপনি ছাড়া কথা বলিনি। মায়ের মুখের উপর কোন কথা বলিনি। আর এই আমার ঘরে নাকী এই রকম একটা ফাজিল বজ্জাত মেয়ে জন্ম নিলো। তার এক মাত্র ভাইটা যে একটা বজ্জাত মেয়ের ফান্দে পরে আজ চার বছর ধরে পাগল হয়ে আছে সে দিকে তার কোন খেয়াল নেই। ঐ বজ্জাত মেয়েটাকে খোজতেই তো আমার পাগল ছেলেটা ঘর থেকে ঢাকা পালিয়ে গেছে। হারামজাদাটাও বজ্জাত কমনা। কেউ তার নাম জিগাইলে ভুলে যায় নিজের নাম। কিন্তু এই পহেলা বৈশাখটা ঠিকি ভুলেনা। চুরের মতো কাউকে কিচ্ছু না বলে পালিয়ে যায়।
মা কার সাথে কথা বলছো একা একা?
তুই কখন এলি সাথী?
সাথীঃ এই তো মাত্র ঘরে ডুকলাম।
মাঃ তোর জামাই আসেনি।
সাথীঃ না মা ওর নাকী আজ একটা কাজ আছে সকালে। তাই বিকেলে আসবে।
মাঃ অহ।
সাথীঃ ভাইয়া কোথায় মা?
মাঃ কেন জানসনা তোর ভাই এই দিন কোথায় থাকে?
সাথী হাহাহাহা করে হেলে দুলে মজা করে হাসতে লাগলো।
মা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন।
এইবার আসুক হারামিটা সোজা পাবনা মানষিক হাসপাতালে দিয়ে আসবো। জেল খানার মতো রুমে বন্ধী থাকবে, খাবে। পালানোর সাধ মিঠিয়ে দেব এবার।
সাথীঃ সেতো প্রতিবার যখন ভাইয়া পালিয়ে যায় তুমি একি কথা বলো। বলেই সাথী একটু হাসলো। তারপর সাথী হাসি থামিয়ে বললো আচ্ছা মা তুমি ভাইয়াকে সুরঞ্জনা নামের কোন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তবে ঢাকার মেয়ে হতে হবে। তবে আর ভাইয়া বুঝতে পারবেনা যে এই সুরঞ্জনা সেই সুরঞ্জনা নয়।
মাঃ চুপ কর বজ্জার। সব গুলি এক রকম বজ্জার হইছে। ঢাকার মায়েরা বুঝি ঘরে ঘরে সুরঞ্জনার জন্ম দিয়ে রেখেছে? তোর যে বজ্জাত ভাই নিজের নাম ভুলে গেলেও সুরঞ্জনার কিচ্ছু সে ভুলে যায়নি। দেখিসনা প্রতিবার আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেক নিয়ে এসে ৫ জুন সুরঞ্জনার জন্ম দিন করে একাএকা।
বজ্জাতের হাড্ডি একটা।

(২)
রাত তিনটা ২৮ মিনিটে দরজায় টুকটুক শব্দ শুনেই সুফিয়া বেগম বুঝে গেলেন নীড় এসেছে।
প্রতিবারই এমন সময়ে সে ফিরে আসে। সুফিয়া বেগম দরজা খুলে নীড়ের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলেন যেন ছেলেকে বহু যুগ পরে দেখছেন। কিন্তু নীড় তার মায়ের এই নজরের দিকে একটু খেয়াল করলোনা। ঘরে ঢুকার আগেই বাহির থেকে বললো মা অনেক খিদা লাগছে ভাত দাও।
মা তার ছেলের মুখে হাত রেখে পরম আদর করে বলতে লাগলেন ভিতরে আয় বাবা।
নীড় কাটের চেয়ারে পা তুলে বসে রইলো। তার মা আগেই ছেলের জন্য টেবিলে ভাত সাজিয়ে নিয়ে বসে ছিলেন। মা জানেন নীড় এসেই মায়ের কাছে ভাত চাইবে। প্রতিবারই এমন ভাবেই সে ভাত চায়।

সুফিয়া বেগম প্লেটে ভাত নিয়ে ছেলেকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে চাইলেন। নীড় বাধা দিয়ে নিজ হাতে খেতে চাইলো। মা বললেন আচ্ছা টিক আছে। নীড় হাত না ধোয়ে ভাতে হাত রাখতেই মা বললেন হাতটা তো ধোয়ে নিবি।
নীড়ঃ মা হাত তো কালকে রাতেই ধোয়েছি মাত্র। তারপর তো আর হাত দিয়ে কিছু ধরিনি। অনেক খিদা লাগছে মা। খেয়ে নেই তারপর না হয় ধোয়ে নেব?
সুফিয়া বেগম মিটিমিটি হেসে হেসে মুখের ইশায় ছেলেকে হ্যা বোধক উত্তর দিলেন।
খুব দ্রুত নীড় তার পাতের ভাত খেয়ে আরো এক প্লেট ভাত নিলো। খুব দ্রুত তাও খেয়ে নিল।
তার খাওয়ার ধরনে বুঝা গেল যে খুব খুদারত ছিল। সুফিয়া বেগম জানেন যে নীড় সারা দিন কিচ্ছু খায়নি। আর খাবেই বা কি করে সে তো যাওয়ার সময় কোন টাকা পয়সা নিয়ে যায়না।
এবং কি তার ট্রেনের ভাড়াও নেয়না। ট্রেনের কোন অফিসার নাকী তার বন্ধু। তাই তার ট্রেনে যাওয়া আসা করতে টিকেট লাগেনা।  মা তাও জানেন যে নীড় সারাদিন পায়ে হেটে হেটে চিরিয়াখানা, বোটানিকেল উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, রমনা পার্ক, সরোয়ারদি উদ্যান, টিএসসি মোর চারুকলা ইন্সটিউটিট, শহীদ মিনার সহ অনেক জায়গায় সুরঞ্জনাকে খোজে বেড়ায়। এক বারে সব জায়গায় ঘুরতে পারেনা এক দিনে। তাই এক পহেলা বৈশাখে যে যায়গা গুলিতে খুজে বেড়ায় পরের বৎসর বাকী যায়গা গুলিতে খুজতে যায়।  নীড় সব সময় ডায়রী লিখে। সুফিয়া বেগম নীড়ের ডায়রী পরেই এত্ত সব জেনেছেন।

সুফিয়া বেগম নীড়কে তার রুমে দিয়ে এসে নিজে নিজের বিছানায় শুয়ে পরলেন। সুফিয়া বেগম জানেন তার ছেলে এখন কম্পিউটারে বসবে। ডাইরী লিখবে। তারপর ঘুমিয়ে যাবে।

নীড় সাধারন তো বাড়ির বাহিরে যায়না। মাজে মাঝে আসে পাশের দোকানে যায়। বাচ্ছাদের জন্য অনেক গুলি চকলেট কিনে নিয়ে আসে। তারপর প্রতিবেশী বাচ্ছা গুলিকে বিলিয়ে দেয়। নিজেও খায়। বাচ্ছারা নীড়কে কেউ মামা ডাকে, কেউ পাপ্পা ডাকে, কেউ বাবা ডাকে, কেউ আবার আব্বু ডাকে। ভাগনা ভাগনি মামা ডাকলেই ভাতিজা ভাতিজি কিন্তু চাচা বা কাকা ডাকেনা। পাপ্পা বাবা আব্বু বলেই ডাকে। মাঝে মাঝে ভাগনা ভাগনি গুলিও ভাতিজা ভাতিজির সাথে ঝগরা লাগে এই বলে যে তোর পাপ্পা না আমার পাপ্পা। নীর ঝগড়া ভাঙ্গিয়ে দিয়ে ভাগনা ভাগনিকে বুঝায় যে মামা বেশী আদর আর মায়ার ডাক। তখন ভাতিজা ভাতিজি ও বলে উটে তবে আমিও মামা ডাকবো।  যদিও ভাতিজা ভাতিজি দু এক বার মামা ডাকে। তারপর ভুলে যায় মামা ডাক। ঠিক আগের মতোই আবার পাপ্পা ডাকা শুরু করে।

আজ নীড় তার মায়ের সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে। নীড়ের কিন্তু ডক্তারের কাছে যেতে ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগার কারনটা হচ্ছে তার রিক্সায় চড়ে। নীড় রিক্সা চড়তে খুব ভালবাসে। কিন্তু নীড়ের একটা জিনিস ভালো লাগেনা। আর সেটা হচ্ছে ডাক্তার। মানে পাগলের ডাক্তার। নীড় জানে যে এই ডাক্তার অনেক বিখ্যাত ডাক্তার। কিন্তু লোকে তাকে পাগলের ডাক্তার বলে না বলে পাগল ডাক্তার। নীড় তার মাকে বললো আচ্ছা মা তুমি খলি আমাকে পাগল ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাও কেন? আরো তো কত্ত বড় বড় নামিদামী ভালো ডাক্তার আছেন।
মাঃ উনি পাগল ডাক্তার নয় বাবা উনি পাগলের ডাক্তার। অনেক নামিদামী সাইকোলজিস্ট।
নীড়ঃ জানী তো। কিন্তু সবাই তো বলে উনি পাগলের ডাক্তার?
মাঃ সবাই বললেই কি তুমি ও বলবা? তুমি না অনেক বুদ্ধিমান।
নীড়কে যখন তার মা বুদ্ধিমান বলেন নীড় তখন খুব খুসি হয়ে সত্যি সত্যি বুদ্ধিমানের ভাব ধরে।
নীড়ঃ আচ্ছা মা আমি তো অনেক বুদ্ধিমান। তবে কেন আমাকে পাগল ডাক্তার থুক্কু পাগলের ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাও। মা আমি কি সত্যি পাগল? জানো মা আমার ফেইসবুকের মেয়ে বন্ধুরা আমাকে পাগল বলে। ছেলেরা কিন্তু তেমন একটা বলেনা।
মাঃ উনি তো অনেক নামিদামী সাইকোলজিস্ট তাই তোমাকে উনার কাছে নিয়ে যাই যাতে তোমার বুদ্ধি কেউ চুরি করতে পারেনা। নীড় তোমাকে না বলেছি তুমি মেয়েদের সাথে কথা বলবেনা। দেখেছো মেয়েরা কত্ত খারাপ। ছেলেরা অনেক ভালো বাবা। তুমি শুধু ছেলের সাথে কথা বলবে কেমন।
নীড়ঃ আচ্ছা মা। জানো মা ফেইসবুকে আমাকে একটা মেয়ে বলেছিল আমার মন চুরি করবে। আমি তাকে বলেছি আমার মন আমার কাছে নেই সুরঞ্জনা নিয়ে গেছে। সুরঞ্জনা আগে জানতো আমার মন তুমি চুরি করবে তাই সে নিয়ে লুকিয়ে রেখে দিছে বলেই খুব হাসতে হাসতে মায়ের  দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো দেখেছো মা আমার অনেক বুদ্ধি।
নীড় এর মা নীড় এর দিকে রাগান্বিত চেহারায় তাকিয়ে আছেন দেখেই নীড় বুঝতে পারলো কেন রাগ করেছেন? তাই সে মাকে বললো সরি মা।
মাঃ ওকে।
নীড়ঃ দেখেছো মা আমার কত্ত বুদ্ধি? আমি তোমার চোখ দেখেই বুঝে গিয়েছি তুমি সুরঞ্জনার নাম শুনে রাগ করেছো। আসলে মা সুরঞ্জনা অনেক ভাল মেয়ে। তুমি শুধু ওর কথা শুনে রাগ করো।
সুফিয়া বেগম একটু রাগান্বিত স্বরে বললেন কেমন ভাল সেটা তো তোর বর্তমান অবস্থা দেখেই  বুঝা যায়।
নীড়ঃ সত্যি বলছো মা আমাকে দেখে বুঝা যায় যে সুরঞ্জনা অনেক ভালো মেয়ে ছিল? জানো মা সবাই আমাকে বলে আমার মাঝে নাকী আমি নাই। আমার মাঝে সুরঞ্জনা আছে। তাই হয়তো আমাকে দেখে সুরঞ্জনা যে ভালো মেয়ে ছিলো বুঝা যায়।
নীড় মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই মা থাকে ইশারা দিয়ে রিক্সা থেকে নামতে বললেন।
নীড় ভাবলো তার মা তার উপর খুব রেগে গিয়ে তাকে রিক্সা থেকে নেমে যেতে বলছেন।
নীড় মাকে সরি বলতেই মা বললেন আরে বাপ নাম আমরা ডাক্তারের চেম্বারে এসে গেছি।
নীড় বেকুব হয়ে গিয়ে লজ্জা বোধক হাসি দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে গেল।

(৩)
লাকী এই লাকী কই গেলি?
লাকীঃ এই তো মা।
মাঃ শুন কালকেই আমি পাবনা যাবো।
লাখীঃ হাসতে হাসতে বললো মা পাবনা তো পাগলরা যায়। তুমি কেন যাবে? তুমি কি পাগল?
মাঃ চুপ বেয়াদব। তোর ভাই একটা যে কোন সুরঞ্জনা না কুরঞ্জনার প্রেমে হাবু ডুবু খেয়ে পাগল হয়ে আছে সেটা কি তোর মাথায় নেই।
লাকীঃ অহ তাহলে তুমি ভাইয়াকে নিয়ে যাবে। আবার নিয়ে আসবে সাথে?
মাঃ হে নিয়ে যাবো, কিন্তু নিয়ে আসবনা। বজ্জাটারে ওইখানে রেখে আসবো।
লাকীঃ কি বলছো মা তুমি? ভাইয়া ঐখানে একা কি করে থাকবে? আমরাই বা ভাইয়াকে ছেড়ে থাকবো কি করে? মা তুমি বলো তুমি কি ভাইয়াকে ছাড়া থকতে পারবে?
মাঃ পারবোনা কেন একশ বার পারবো। বলেই চোখের কোণ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরলো সুফিয়া বেগমের। পারলেনা তিনি নিজের সাথে যুদ্ধ করে কষ্টটাকে লুকিয়ে রাখতে। পারলেননা নিজেকে পাশান করে নিতে।
লাকী ও মায়ের সাথে কেদে দিলো। মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কাদতে লাগলেন।
কান্না জরিত কন্ঠে লাকী মাকে প্রশ্ন করলো-আচ্ছা মা ভাইয়া পাবনা কয়দিন থাকবে।
মাঃ ডাক্তার বলেছেন এক বৎসর এর ভিতরে তোর ভাইয়া সুস্থ হয়ে উঠবে।
লাকীঃ সত্যি মা ভাইয়া আবার ভাল হয়ে যাবে। তবে আর আমি কাদছি কেন? মায়ের চোখ মুছে দিতে দিতে বললো- এটা তো খুসির খবর মা। তবে বোকার মতো কাদছি কেন আমরা?
সুফিয়া বেগম ডান হাতের তালু দিয়ে নিজের চোখ মুছে খুব সুখ প্রকাশের হাসি হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলেন।


খুব সকালে সুফিয়া বেগম নীড়কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন আজ আমরা অনেক দূরে বেড়াতে যাবো।
নীড়ঃ সত্যি মা।
মা হ্যা সোনা মা কখনো মিথ্যে বলতে পারে ছেলের সাথে।
নীড় মাথা নেড়ে না সুচক উত্তর করলো।
সুফিয়া বেগম বললেন তারাতারী তৈরি হয়েনে। সুন্দর জামা পরিস কিন্তু। যাতে তোকে খুব হেন্ডসাম দেখায়।
নীড়ঃ মা খয়েরী সর্ট পাঞ্জাবীটা পরি।
মাঃ কোনটা?
নীড়ঃ ঐ যে সুরঞ্জনা শেষ বার যেটা দিয়েছিলো। ঐ পাঞ্জাবিটা পরেই তো আমি সুরঞ্জনাকে সোনালী রঙের শাড়ি পড়া বউর সাজে শেষবার দেখে ছিলাম। আচ্ছা মার তারপর সুরঞ্জনা বউর সাজে কোথায় গেল। আমার তো কিচ্ছু মনে পরছেনা। আমি তো সেদিন সুরঞ্জনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু আমি ঘুম ভেঙ্গে যে দেখলাম আমি ঢাকা মেডিক্যালের বিছানায়।
কি ভাবে কি হলো মা আমি তো কিচ্ছু মনে করতে পারছিনা। কথা গুলি বলতে বলতে নীড় মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে মা রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছেন। তাই সে মায়ের দিকে মুছকি হাসি দিয়ে বিনয়ের সাথে বললো সরি মা।
মাঃ ওকে । আচ্ছা যাও আজ তোমার ইচ্ছের পাঞ্জাবীটা পরে নাও। তবে আর কোন দিন কিন্তু পাজাবিটা আর পরতে পারবেনা।
নীড়ঃ থ্যাংস লক্ষি মা আমার।

 নীড় কারের সামনে বসতে চাইলো। সুফিয়া বেগম বললেন না নীড় তুমি মায়ের সাথে বসবে আজ সারা দিন। মা আজ তোমাকে সারা দিন পাশে বসিয়ে আদর করবে । মুখে তুলে খাওয়াবে । মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে । কি বসবেনা মায়ের পাশে?
নীরঃ মা আসার সময় না হয় সারাটা পথ তোমার পাশে বসে আসবো। নীড়ের মা কথা শুনে খুব কষ্ট পেলেন । কারন উনি জানেন কিন্তু নীড় জানেনা নীড় যে তার সাথে ফিরছেনা। তাকে একা একা ফিরে আসতে হবে। তিনি অনেক দিন তার ছেলে মুখে তুলে খাওয়াতে পারবেননা। মাথায় হাত ভুলিয়ে আদর করতে পারবেননা।
লাকীর মা ওমা   ডাকে সুফিয়া বাস্তবতায় ফিরলেন। মা ভাইয়া যখন সামনে বসতে চাইছে তবে তাকে সামনেই বসতে দাও।
সুফিয়া বেগম চশমার ফাক দিয়ে শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলান।
নীড় বিদ্যুৎ গতিতে গাড়ির সামনে সিটে বসে ধপাশ করে দরজাটা লাগিয়ে ড্রাইভারের দিকে থাকিয়ে সরি বললো।
ড্রাইভার কি বুঝলো নীড় তা জানেনা কিন্তু ড্রাইভারে হাসিটা সে ঠিকি খেয়াল করলো।
লাকী নীড়ের দিকে ছলছল জলে ভেজা চোখ নিয়ে বললো ভাইয়া ভাল থাকিসরে।
নীড় লাকীর মাথার পিছনে টুকা দিয়ে বললো তুই যে ভাবে বলছি মনে হচ্ছে আমি যেন মঙ্গল গ্রহে চলে যাচ্ছি এক বছরের আগে আর ফিরতে পারবোনা।
লাকী আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা। কেদেই ফেললো।
নীড় মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো দেখেছো মা তোমার মেয়েটা কত্ত ঢং করে।
আবার লাকীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো পাগলি কাদিস না আমি তো কয়েক দিনের মাঝেই ফিরে আসবো বলেই মায়ের দিকে তাকিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলো তাইনা মা?
সুফিয়া বেগম আচল দিয়ে চোখ গুলি ডেকে নিয়ে মাথা নেরে হ্যা সূচক উত্তর দিলেন। নীড় দৃষ্টিটা সরাতেই সাথে সাথে চশমা খুলে চোখ দুটি মুছে নিলেন।

নীড়ের মুখে আনন্দ উল্লাস এতোটা ফুটে উঠতে কেউ দেখেনি বিগত পাচ বছরে।
না সুফিয়া বেগম না লাকী না সাথী না তার ভাগনা ভাগনি ভাতিজা ভাতিজি না পাড়া প্রতিবেশী।
কিন্তু এক সময় নীড়ই ছিল উতসব আনন্দের প্রাণ। গান বাজনা হই হুল্লোড় দিয়ে মাতিয়ে রাখতো পুরো পারাটাকে।

গাড়ি স্টার্ট হলো লাকী, বাচ্চারা, পারার ভাই, ভাবি, মামা, মামি, চাচা, চাচী, বন্ধু বান্ধব সবাই নীড়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। নীড় আনন্দে চিৎকার করে সবাইকে টাটা দিতে থাকলো।
জলে ভেজা চোখ নিয়ে যে সবাই নীড়কে টাটা দিচ্ছে নীড় সে দিকে একটু খেয়াল করলোনা।
কারন নীড় তো আর জানেনা যে সে আর এক বছরের ভিতর তাদের মাঝে ফিরছেনা।

(৪)
সুফিয়া বেগম নীড় ডাক্তার নার্সরা একটা লম্বা ফ্লোরের একটা রুমে ঢুকলেন। ঢুকার সময় নীড় দরজার উপরে লেখা দেখল CABIN NO-05।  নীড় সে দিকে তেমন খেয়াল করলনা । সে খেয়াল করলো রুমের ভিতর একটা নতুন কম্পিউটার। কম্পিউটার ডেক্সে অনেক গুলি গানের সিডি। একটা মোডেম একটা পেনড্রাইভ আর বড় একটা হেড ফোন রাখা। নীড় মাথা ঘুরিয়ে রুমের ডান পাশে দেখলো একটা সাজানো গোছানো খাট।
খাটের চাদর বালিশ কাভার একে বারেই নতুন। চাদর আর বালিশ কাভারের রং টা ও নীড় এর প্রিয় রঙ এর । কালো বেকগ্রাউন্ড তার মাঝে হালকা আবছা আবছা সাদা ফুলের ছবি। নীড় এর প্রিয় রং সাদা কালো তো তাই নীড় এর বিছানাটা খুব পছন্দ হলো। তাই সে লাফ দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। শুয়েই নজর পড়লো তার পায়ের দিকে খাটের শেষ সীমানায় একটা বুক সেলফ। নীড় আবার লাফ দিয়ে উঠে সেলফের কাছে গিয়ে সব গুলি বই এর নাম দেখে বুঝতে পারলো একে বারেই নতুন বই সব গুলি। নীড়ে রুমটা অনেক পছন্দ হলো। সুফিয়া বেগম জানতেন রুমটা উনার ছেলের অনেক পছন্দ হবে।  কারন মেডিক্যালের এই বিছানাটা নিজ হাতেই সাজিয়েছেন তিনি উনার ছেলে পছন্দ মতো করে।
নীড়ের ভাবসাব দেখেই সুফিয়া বেগন বুজেছেন উনার ছেলের রুমটা অনেক পছন্দ হয়েছে। সুফিয়া বেগম তবুও নীড়কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন- বাবা ঘরটা তোমার পছন্দ হয়েছে।
নীড় অনেক আনন্দ উল্লাস নিয়ে হাত পা নাড়িয়ে বলতে লাগল হে মা অনেক পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা মা আমি যদি এই ঘরটা আমাদের বাসায় নিয়ে যাই তুমি কি রাগ করবে।
মাঃ না বাবা ঘরটা তো আমাদের না। ডাক্তার নার্সদের দেখিয়ে বললেন ঘরটা তো উনাদের।
নীড় মন মরা করে বললো অহ তাই। আচ্ছা মা আমি এই এই ঘরে থেকে যাই তুমি আমাকে বকবে।
মাঃ সত্যি তুমি কি এই ঘরে থাকবে?
নীড়ঃ হে মা থাকবো। ঘরটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
মাঃ তা হলে তুমি আজ থেকে এই ঘরেই থাকবে।
নীড় থ্যাংকস মা।
মাঃ তাহলে আমি চলে যাই কেমন?
নীড়ঃ আচ্ছা মা চলে যাও। আমার জন্য তুমি টেনশন করনা। আমি এখানে অনেক ভাল থাকবো। আমার কম্পিটার আছে নতুন নতুন বই আছে । আমার অনেক ভাল লাগবে মা এখানে থাকতে।
মাঃ আচ্ছা বাবা আমি তবে চলে যাচ্ছি বলেই ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে কয়েকটা লক্ষি চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ভাল থাকিস বাবা। আমি তোকে মাঝে ফোন দেব।
নীড়ঃ আচ্ছা মা। মা তুমি এখন চলে যাও আমি এখন ফেইসবুক চালাবো। আজ এক বারো ফেইসবুক চালাইনি।
সুফিয়া বেগম ছেলের বোকামি দেখে খুসিই হলেন। উনি ভাবেননি যে উনি এতো সহজে
এই পাবনা মানষিক হাসপাতালে ছেলেকে রেখে যেতে পারবেন। কান্নার বদলে একা একা তিনি মুচকি হাসলেন। এরই মধ্যে নীড় কম্পিউটার অন করে ফেলেছে। সুফিয়া বেগম আবারো ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আসি তবে নীড়। নীড় কম্পিউটারের দিকে তাকিয়েই মাথা নেড়ে ও মুখে বললো আচ্ছা মা।

সুফিয়া বেগম আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আরেকবার ভিতরে উকি দিয়ে দেখলেন। কিন্তু না নীড়ে এদিকে কোন খেয়াল করলোনা। সে তার কম্পিউটারে বসে কি যেন টাইপ করছে আপন মনে। সুফিয়া বেগম চোখের চশমাটা হাতে নিয়ে চোখ দুটি মুছতে মুছতে চলে গেলেন।

নীড়ের কোন বন্ধু নেই। গত পাঁচ বছর ধরেই নীড়ের বন্ধু কম্পিউটার আর এই বই। নীড়ের মা বোন পাড়া প্রতিবেশী এবং কি ডাক্তার নার্সরাও জানেন যে নীড় এই বই আর কম্পিউটারের সাথে সাড়া জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। তারা এও জানেন যে নীড় খুব ভালো লিখতে পারে। সে  ৫বছর আগে ডাইরি নোট বুক এবং কি মাঝে মাঝে আঞ্চলিক পত্রিকায় লিখতো। এখন সারাদিন অনলাইন নিউস পরে ফেইসবুক আর বাংলা ব্লগে লেখালেখি করে। তার নিজস্ব একটা ব্লগ ও আছে প্রেমিক মাতাল নামে। তার ফেইসবুক আইডির নামও প্রেমিক মাতাল। সুরঞ্জনা তাকে সব সময় প্রেমিক মাতাল নামে ডাকতো বলেই তার ফেইসবুক আইডি আর ব্লগের নাম প্রেমিক মাতাল। সে তার সবগুলি লেখা প্রেমিক মাতাল ব্লগে সংরক্ষিত করে রাখে। তার বিশ্বাস কোন একদিন সুরঞ্জনা তার এই ব্লগে তার লেখা গুলি দেখবে এবং অনেক অনেক কাদবে তার জন্য। নীড় এর বিশ্বাস সুরঞ্জনা এখনো তাকে ভালবাসে। প্রতিরাতে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যায়। এ ভাবেই কেটে গেল তার ১০টি মাস পাবনা মাগষিক হাসপাতালে।
ডাক্তার নার্সরা নীড়ের মানষিক সমস্যার অনেকটা উন্নতি দেখতে লাগলেন।

ডাক্তার নার্সরা একদিন নীড়কে নিয়ে আলচনায় বসলেন। এই আলোচনার প্রধান ডাক্তার রাকিব সবার উদ্দ্যেশে বললেন নীড়কে  মাত্র এক মাসে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলা সম্ভব।
সকল ডাক্তার নার্সরা অভাক বিস্ময়ে বলে উঠলেন কি ভাবে স্যার।
ডাক্তার রাকিব আবার বললেন নীড় যেহেতু সুরঞ্জনা নামক মেয়ের ভালবাসায় আজ তার এই অবস্থা। সেহেতু নীড়কে এখন কোন মেয়ের ভালবাসা দিয়েই সুস্থ করা সবচেয়ে সহজ মাধ্যম।
সবাই এক সাথে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সদ্য জয়েন্ট করা অল্প বয়সি সুন্দরি নার্স তাসলিমা নাসরিন বললেন কিন্তু স্যার কে ভালবাসবে উনাকে।
সবাই আবার এক সাথে বলে ঊঠলেন হ্যা তাইতো। ডাক্তার রকিব তাসলিমা নাসরিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন মিস তাসলিমা রহমান আপনি পারেন নীড়কে ভালবাসতে।
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেন তাসলিমার দিকে। তাসলিমা কি উত্তর দেয় তার জন্য।
তাসলিমা নাসরিনঃ কিন্তু স্যার আমি কি করে উনাকে ভালবাসব? আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। খুব বিমর্ষ মুখ নিয়ে তাসলিমা রহমান কথাটা বলেন।
সিনিয়ার ডাক্তার নাজমা ইসলাম বলে উঠলেন তাসলিমা আপনি তো আর সত্যি সত্যি নীড়ে সাথে প্রেম মানে ভালবাসা করছেননা। জাস্ট অভিনয় করবেন।
সিনিয়র নার্স মিলি আক্তার বললেন উঠলেন মেডাম মানলাম তাসলিমা রাহমান নীড়ের সাথে ভালবাসা বা প্রেমের অভিনয় করবেন। কিন্তু যখন নীড় জানতে পারবেন যে তাসলিমা রহমান নীড় এর সাথে এতদিন অভিনয় করেছেন অথবা তাসলিমা রহমান সুরঞ্জনার মতোই আরেক জনকে বিয়ে করেছেন তখন নীড় এর কি অবস্থা হবে?
তাসলিমা রহমানও ডাক্তার রাকিবের উদ্যেশে বলে উঠলেন তখন কি হবে স্যার? তখন কি নীড়কে আমরা বাচাতে পারবো?
ডাক্তার রাকিব এবং ডাক্তার নাজমা ইসলাম চিন্তায় পরে গেলেন।
সবাই চুপ কেউ কোন কথা বলছেননা।
তারি মাঝে তাসলিমা রহমান চিৎকার করে বলে উঠলেন পেয়েছি, পেয়েছি।
সবাই এক সাথে বলে উঠলেন কি পেয়েছেন?
তাসলিমা রহমানঃ ফেইসবুক।
ডাক্তার রাকিবঃ ফেইসবুক দিয়ে এখানে কি হবে?
তাসলিমা রহমানঃ স্যার নীড় সারাদিন ফেইসবুক নিয়ে পরে থাকেন। অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প কবিতা লিখে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
ডাক্তার রাকিবঃ তাতে আমাদের সুবিদা কি মিস তাসলিমা রহমান?
তাসলিমা রহমানঃ সাধারন তো মেয়েরা কবি বা কবিতার প্রেমে পরে যায় খুব তারাতারি। আমি সব সময় দেখি নীড় এর সাথে মেয়েদের খুব বেশী চ্যাট হয়। এই মেয়েদের মাঝে কেউ এক জন যদি নীড়কে  ভালবেসে ফেলেন তবেই তো নীড় এক মাসের মাঝে পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
সবাই এক সাথে বলে উঠলেন গুড আইডিয়া।
ডাক্তার রাকিবঃ নো রিস্ক নোগেইন। মিস তাসলিমা রহমান নীড়ের ভালবাসা কিন্তু আপনাকে নিতে হবে।
সবাই এক সাথে হেসে উঠলেন কিন্তু ডাক্তার রাকিব কিন্তু বুঝতেই পারলেন না উনাদের হাসির কারনটা কি? এটাই সম্ভবত পাগলের ডাক্তার বা পাগল ডাক্তারের বৈশিষ্ট।
ডাক্তার নাজমা ইসলামঃ স্যার আপনি বলেছেন মিস তাসলিমা রহমান নীড়ের ভালবাসা কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। কিন্তু আপনার বলা উচিত ছিল নীড়ের ভালবাসা দ্বায়িত্ব কিন্তু আপনাকে নিতে হবে।
এখন ডাক্তার রাকিবও জোরে জোরে হাসতে লাগলেন। সাথে অন্যন্য সবাই। যে কেউ এই হাসি শুনেই বুঝতে পারবে এটা কোন মানষিক হাঁসপাতাল।

(৫)
নীড় প্রতিদিন রাত ১২টার পর নটিফিকেশন দেখে সবাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।
আজ দেখলো মাত্র পাঁচ জনের জন্ম দিন। তাই খুব সহজেই সবাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো ম্যসেজ করে। এক মিনিট পরেই মেঘ বালিকা নামক আইডি থেকে প্রতি উত্তর আসলো। thank"s.
নীড় খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো স্বাগতম। কারন নীড় সব সময় এখন খুব সাধারন আচরনই করে। কোন সময় সে অবাক বা উত্তেজিত হয়না বা হতে পারেনা। নীড় দেখলো গত এই দিনেও সে মেঘ বালিকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিল। সে আবার মেঘ বালিকাকে ম্যাসেজ দিল- স্বাগতম। পুরা এক বছর আবার আপনার সাথে কথা হলো।
মেঘ বালিকাঃ জানো আজ আমাকে তুমিই প্রথম ইউস করলে। আমি অপেক্ষায় আছি কখন আমায় সবাই ইউস করবে।
নীড়কে তুমি করে বলায় নীড় বিরক্ত হলো। নীড় কাউকে তুমি করে বলেনা তাই কেউ তাকে তুমি করে বললে সে খুব বিরক্ত হয়। সেই বিরক্তি নিয়েই লিখলো আপনার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি।
মেঘ বালিকাঃ অশেষ ধন্যবাদ। তোমার জন্যও শুভ কামনা রইলো।
নীড়কে আবার তুমি করে বলায় নীড় বিরক্ত হয়ে আর কোন ম্যাসেজ দিলনা মেঘ বালিকাকে। নীড় ইন্টারনেট লাইন অফ করে কম্পিউটার অন রেখেই বিছানায় গিয়ে মোঃ জাফর ইকবাল এর তিতুনি ও তিতুনি বইটা পড়তে লাগলো। পড়তে পড়তে এক সময় নীড় ঘুমিয়ে পরল।

নীড় খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠে। কারন সে খুব দেরি করেই ঘুমায়। ঘুম থেকে উঠেই সে প্রতিদিন আগে কম্পিউটার অন করে। রাতে যেহেতু কম্পিউটার অন করেই ঘুমিয়ে ছিল তাই এখন আর অন করতে হলনা। ইন্টানেট কানেকশন দিয়ে দাত ব্রাশ করতে লেগে গেল। ব্রাশ করতে করতে নটিফিকেশন চেক করে দেখতে পেল মেঘ বালিকা তার অনেক গুলি পোস্টে কমেন্ট করেছে। সে দাত ব্রাশের কথা ভুলে গিয়ে মুখের ভিতর ব্রাশ রেখেই কমেন্টের উত্তর করতে লাগলো। নার্স তাসলিমা রহমান নাস্তা নিয়ে এসে দেখলেন নীড় ব্রাশ মুখের ভিতর আঠকে রেখে বিষণ স্প্রিডে কম্পিউটারের কি বোর্ড চাপছে।
নার্স উকি দিয়ে দেখলেন যে নীড় চ্যটিং এ ব্যস্ত মেঘ বালিকার সাথে। নার্স নীড়কে বললেন নীড় ভাইয়া যান বেসিনে গিয়ে মুখ ধোয়ে আসুন।
নীড়ঃ নার্স আপু একটু প্লিজ অপেক্ষা করুন। আমি এই মেস্যেজটা দিয়ে আসছি।
তাসলিমা রহমান কোন দিন নীড়কে কোন কিছুতে এতোটা আগ্রহী দেখেননি। তাই তাসলিমা খুব অবাক হলেন। কারন নীড় তার আগ্রহ চমকানো অবাক হওয়া বোধটা হারিয়ে ফেলেছে গত ছয় বছর ধরে। তবে কি নীড় আবার সুস্থ হয়ে উঠছেন। তসলিমার মাঝে কেমন যেন একটা আনন্দ কাজ করছে।

নীড় বেসিনে এসে মুখ ধোতে লাগলো তসলিমা রহমান নীড়ের কম্পিউটারে কাছে গিয়ে দেখতে লাগলেন নীড় এতক্ষন মেগ বালিকার সাথে কি কি কথা বলছিলো ম্যাসেজে।
নীড় বেসিন থেকে দৌড়ে এসে মনিটরের সুইচটা অফ করে দিয়ে তাসলিমা রহমানকে বললো কারো পারসোনাল কিচ্ছু দেখতে নেই।
তসলিমা রহমান লজ্জা পাওয়ার বধলে আরো অবাক হলেন কারন তিনি প্রতিদিনই নীড় এর কম্পিউটারের চেয়ারে বসে  ফেইসবুক এ নীড় কি কি স্ট্যাটাস দিয়েছে। কার কার সাথে চ্যাট করেছে। কি কি কথা বলেছে সব দেখতেন। কোন আজ কিভাবে নীড়ের পারসোনাল বোধ আসলো তবে কি নীড় কারো প্রেমে পড়ে গেছে। তবে কি এই প্রেমিই নীড়কে সম্পূর্ণ বোধশক্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে।  তসলিমা রহমান তারাহুরা করে নীড়ের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলেন। সম্ভবত ডাক্তার রাকিবকে বলতে গেছেন নীড় এর এই পরিবর্তন এর কথা। কিন্তু নীড় ভেবেছে মেয়েটা বুঝি খুব লজ্জা পেয়ে চলে গেছে। নীড় ভাবল তছলিমার সাথে তার এমন আচরন করা ঠিক হয়নি তার।

দুপুরে অন্য নার্স এসে নীড়কে খাবার দিয়ে গেলন।
রাতে তসলিমা রহমান নীড়ের রুমে খাবার নিয়ে আসলেন। তখন রাত দশটা প্রায়। তিনি দেখলেন নীড় মেঘ বালিকার সাথে চ্যাটে ব্যস্ত। তবুও তিনি নীড়কে ডেকে বললেন নীড় ভাইয়া খেয়ে নিন।
নীড়ঃ প্লিজ একটু অপেক্ষা করুন।
তাসলিমা রহমানঃ আচ্ছা বলে কপিউটারের দিকে তাকিয়ে দেখলে মেঘ বালিকা একটা ফোন নাম্বার সেন্ট করেছে নীড়কে। সাথে সাথে নীড় তাসলিমার দিকে ফিরে তাকালো।
তাসলিমা রহমান একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে সরে গেলেন।
নীড় কম্পিউটারের চেয়ার থেকে উঠে তার বিছানায় এসে বসে তসলিমাকে উদ্যেশ্য করে সরি বললো। তসলিমা রহমান বুঝতে পারলেননা কেন নীড় তাকে সরি বলছে। তাই তিনি নীড়কে প্রশ্ন করলেন সরি কেন?
নীড়ঃ সকাল আপনার সাথে খারাপ আচরণ করেছি বলে।
তাসলিমা রহমানঃ আরে এর জন্য সরি বলতে হবে না। এটা তো আমারি দোষ ছিলো।
নীড়ঃ তারপরো আপনার সাথে আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। আচ্ছা আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাইতে পারি?
তসলিমা নাসরিন বুঝতে পারছেন নীড় একেবারে পূর্ণ সুস্থ মানুষের মতোই কথা বলছে।
তার মধ্যে এখন কোন মানষিক অসুস্থতা নেই।
তসলিমা রহমানঃ কি সেটা?
নীড়ঃ আপনার মোবাইলটা আমাকে দেবেন আমি একজনের সাথে কথা বলবো?
তসলিমা নাসরিনঃ কে সে নিশ্চয়ই মেঘ বালিকা?
নীড় লজ্জা বোধ নিয়ে নিচের দিকে মাথা রেখে মাথা উচু নিচু করে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
তসলিমা রহমানঃ আমার কাছে একটা অতিরিক্ত সিম আছে কিন্তু হেন্ডসেট তো নেই।
নীড়ঃ শুধু সিম হলেই চলবে । আমার মডেমে লাগিয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে কল করতে পারবো।
তাসলিমা নাসরিনঃ বাহ আপনার তো দেখি অনেক বুদ্ধি। আচ্ছা আপনি খেয়ে নিন আমি আমার হেন্ডব্যাগ থেকে সিমটা এনে আপনাকে দিচ্ছি।
নীড়ঃ ওকে বলেই খেতে বসে গেল। তসলিমা রহমান ও সিম আনার উদ্যেশ্যে চলে গেলেন।


(৬)
তসলিমা রহমান নীড়ের কেবিনের কাছে এসে হালকা খোলা দরজার ফাক দিয়ে দেখতে পেলেন নীড় কানে বড় বড় হেডফোন লাগিয়ে চুপি চুপি কথা বলছে। তার কথা বলার ধরণে বুঝা যাচ্ছে সে খুব গুপন ভাবে কথা বলছে যাতে কেউ না শুনে। অল্পক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নীড় এর কোন কথা বুঝতে না পেরে চলে গেলেন অন্য কেবিনে।

তসলিমা রহমানের রাতের ডিউটি। ডিউটি শুরু হয় রাত আটটা থেকে শেষ হয় সকাল আটটায়। তাই তিনি সকালেই চলে গিয়েছিলেন। সারা দিন আর আসতে পারনেনি নীড়ের রুমে।  আজ রাতে ডিউটিটে এসেই নীড়ের রুমে ডুকলেন। রুমে নীড় নেই। ভাবলেন হয়তো বাথরুমে গেছে। তাই তিনি নীড়ের কম্পিউটারের চেয়ারে বসে ফেইসবুকের ম্যাসেজ গুলি পড়তে লাগলেন। প্রতিদিন অসংখ্য মেয়েরা চ্যাট করে কিন্তু আজ মাত্র তিনজন। তাসলিমা রহমান বাকী দুজনকে বাধ দিয়ে মেঘ বালিকার সাথের চ্যাট গুলি পড়তে লাগলেন। নীড়ের সাথে মেঘ বালিকার চ্যাট পড়ে বুঝতে পারলেন তিনি মেঘ বালিকা মেয়টি নীড়কে সুস্থ করে তুলতে চায়। নীড়ও মেঘ বালিকার প্রেমে পরে গেছে।
নীড় কাল সকালে এখানে থেকে পালিয়ে ঢাকা যাবে মেঘ বালিকার সাথে দেখা করতে। কিভাবে পালাবে নীড় তাও বলেছে মেঘ বালিকাকে। নীড় মেঘ বালিকাকে চ্যাটে বলেছে তার পহেলা বৈশাখে খয়েরী সর্ট পাঞ্জাবী পরতে ভালো লাগে। তসলিমা রহমান বাথরুমের দরজার শব্দ শুনে কম্পিউটার এর চেয়ার থেকে উঠে নীড়ের খাটে এসে বসে পরলেন।
নীড় বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে তাসলিমা রহমানকে বললো কখন আসলেন নার্স আপু।
তাসলিমা রহমানঃ এই তো এই মাত্র।
নীড়ঃ অহ।
তাসলিমা নাসরিনঃ কাল তো পহেলা বৈশাখ। আমি আপনাকে একটা জিনিস গিফট করতে চাই। আপনি কি নেবেন?
নীড়ঃ কি গিফট?
তাসলিমা রহমানঃ আপনার প্রিয় খয়েরী রঙ্গের সর্ট পাঞ্জাবি।
নীড়ঃ অবশ্যই নেব। কিন্তু আপনি জানলেম কি ভাবে খয়েরী রঙ্গের সর্ট পাঞ্জাবি আমার প্রিয়?
তাসলিমা রহমানঃ আমতা আমতা করে বললেন আপনার মা বলেছেন।
নীড়ঃ অহ তাই বুঝি। কিন্তু মা তো নিষেধ করেছে ঐ ধরনের পাঞ্জাবী পরতে।
তাসলিমা রহমানঃ কিন্তু এখন থেকে আর করবেননা। কেন করবেনা জানেন? নীড় তসলিমা রহমানকে থামিয়ে দিয়ে বললো হ্যা জানী। কারন আমি এখন পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
তসলিমা নাসরিনঃ আপনি কিভাবে জানলেন আপনি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন?
নীরঃ আমি আমাকে খুব বেশী বুঝতে পারি। আমার চেয়ে আমাকে আর কেউ বেশী বুঝতে পারেনা। তবে একজন আগে আমাকে অনেক বুঝতে পারতো আর সে হলো- তসলিমা রহমান নীড়কে বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি বলে উঠলেন সুরঞ্জনা। বলেই খুব অট্ট হাসি হাসতে লাগলেন। এবং নীড়ের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন অভিনন্দন মিস্টার নীড়। আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। নীড় ধন্যবাদ জানালো তসলিমা রহমানকে।
তসলিমা নাসরিন স্বাগতম বলে চলে গেলেন নীড়ের কেবিন থেকে বের হয়ে।

কিছুক্ষন পর ফ্লোরের দারোয়ান এসে নীড়কে একটা ব্যাগ হাতে দিয়ে বললেন নার্স তসলিমা মেডাম আপনাকে এটা দিতে বলেছেন। নীড় জানে এতে কি আছে তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাগটা হাতে নিল। ব্যাগটা হাতে দিয়ে দারোয়ান তসলিমার কাছে এসে বললেন মেডাম দিয়ে এসেছি।
তসলিমা রহমানঃ গুড। কাল সকালে নীড় এখান থেকে পালাবেন।
দারোয়ানঃ কেন পালাবেন উনি? আমি থাকতে উনি পালতে পারবেননা এই বলে রাখলাম।  খুব বীরত্ব ভাব নিয়ে হাতের লাটিটা ফ্লোরে জোরে আগাত করে কথাটা বললেন দারোয়ান।
তসলিমা রহমান ধমকের শুরে বললেন- তোমার উনাকে আটকাতে হবেনা। তুমি উনাকে পালাতে সাহায্য করবে। উনি যেন বুঝতে পারেননা যে উনাকে পালাতে আমরা সাহাজ্য করছি। এই নাও ট্রেনের টিকেট।
দারোয়ানঃ টিকিট দিয়া আমি কি করমু?
তসলিমা রহমানঃ এইটা পাবনা থেকে কমলাপুরের ট্রেনের টিকেট। কাল সকালে যখন নীড় পালাবেন এখান থেকে, তুমি তখন উনার পিছু পিছু যাবে। ঙ  বগির টিটিকে এই  টিকেট দিয়ে বলবে ২১ নাম্বার সিটে যেন নীড়কে বসিয়ে দেন। আর টিটিকে বলবে নীড়  এর মাথায় একটু সমস্যা আছে। উনি যেন একটু খেয়াল রাখেন। যদিও নীড় এখন পুরোপুরি সুস্থ তাকে নিয়ে কোন টেনশন নেই। তবুও টিটিকে বলে দিও।
দারোয়ানঃ আইচ্ছা মেডাম। কিন্তু বড় স্যার।
তসলিমা রহমানঃ কোন সমস্যা নেই রকিব স্যার সব জানেন।
দারোয়ানঃ আইচ্ছা মেডাম কোন চিন্তা কইরেননা। আমি থাকতে আপনার কোন ভরসা নাই। থুক্কু আপনে থাকতে আমার কোন ভরসা নাই। দূর কোনটা সডিক কোনটা ভুল বুজতাছিনা।
তসলিমা রহমান বললেন তোমার বুজা লাগবেনা। বলেই সিরি দিয়ে নিচে নেমে যেতে লাগলেন।

রাতে নীড় তসলিমা রহমানের কাছ থেকে মোবাইল সিম নিয়ে মডেমে লাগিয়ে মেঘ বালিকাকে কল করলো। কিন্তু মেঘ বালিকা কল রিসিভড করলনা। তাই নীড় মন খারাপ করে বসে বসে রইলো অনেকক্ষণ। কিন্তু না এখনো মেঘ বালিকা কল ব্যাক করলনা। এরই মাঝে তসলিমা রহমান হটপট দিয়ে খাবার নিয়ে আসলেন। এসে বুঝলেন নীড় এর মন খারাপ। তিনি ধরনা করে নিতে পারলেন যে মেঘ বালিকার সাথে নীড়ের ফোনে কথা হয়নি। নীড় কম্পিউটার থেকে মডেম খুলে মডেম থেকে সিম খুলে তসলিমা নাসরিনের দিকে ধরে বললো নিন আপনার সিম। তসলিমা রহমান সিম হাতে নিয়ে বললেন কথা বলেছেন?
নীড় মন মরা হয়ে মাথা নেরে হ্যা সূচক উত্তর করলো। তসলিমা নাসরিন মুচকি হাসলেন নীড় মিথ্যে বলছে বলে। কিন্তু নীড় ভাবল সে কথা বলেছে সত্যি ভেবেই তসলিমা রহমান মুচকি হাসছেন। তসলিমা রহমান সিমটা বিছানায় রেখে বললেন এখন এখানে থাক যাবার সময় নিয়ে যাবো।

নীড়ঃ আজ হটপটে খাবার কেন?
তসলিমা রহমানঃ কাল যে পহেলা বৈশাখ জানেন তো? যদিও তসলিমা নাসরিন জানেন যে নীড় জানে কাল পহেলা বৈশাখ। নীড় যে জানে তিনি জানেননা বুঝাতেই প্রশ্ন করলেন।
নীড়ঃ হ্যা জানী তো।
তসলিমা নাসরিনঃ গুড বয়। কাল তো পহেলা বৈশাখ। কাল আমার ছুটি। কাল তো আপনার সাথে আমার দেখা হবেনা তাই আজ নিজ হাতে রান্না করে আপনার জন্য নিয়ে আসলাম।
নীড়ঃ তার মানে আপনি আমার জন্য ইলিশ মাছ এনেছেন। নীড় নাক টেনে টেনে ঘ্রান নিয়ে বললো আহা কি ঘ্রান। কিন্তূ আমি যে মাছ খেতে ভয় পাই। যদি কাটা লেগে যায়।
তসলিমা রহমান হাসতে হাসতে বেসিনের দিকে গিয়ে নিজের হাতটা ধোয়ে এসে প্লেটে ভাত আর বড় একটা ইলিশ মাছের পেটের টোকরা আর এক টোকরা ইলিশের ডিম নিলেন।
নীড়ঃ হাত তো ধোইনি। হাতটা ধোয়ে আসি।
তসলিমা রহমানঃ হাত ধোতে হবেনা। আজ আমার হাতেই খাবেন। কি কোন সমস্যা আছে?
নীড় মুচকি হেসে বলল লজ্জা লাগছে তো।
তসলিমা রহমান ভাত মেখে নীড়ের মুখের কাছে নিয়ে এসে বললেন হা করেন।
নীড় লজ্জায় মোরামোরি করতে লাগলো।
তসলিমা নাসরিন ভালবাসা মাখা ধমকের সুরে বললেন আর লজ্জা পেতে হবেনা। হা করুন।
নীড় ধমক ভয় পায়। তাই হা করে ভাত মুখে নিলো।
এ ভাবেই হাসা হাসি করে তসলিমা রহমান নীড়কে খাওয়াচ্ছেন। নীড় ও খাচ্ছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে তসলিমা নাসরিন ইচ্ছে করেই সিমটা যেখানে রেখে ছিলেন সেখানেই রেখে চলে গেলেন।
কারন উনি জানতেন মেঘ বালিকা রাতে নীড়কে ফোন দেবে।

রাত ১২ টা ১৪ মিনিটে নীড় ফেইসবুকে দেখলো মেঘ বালিকা ম্যাসেজ করেছে। সে ম্যাসেজটা ওপেন করে দেখলো- তুমি মিস কল দিলে কেন?
নীড় প্রতি উত্তর দিলো- মিস কল দেইনি তো কল দিয়ে ছিলাম। কিন্তু মাত্র একবার কল দিয়েছিলাম ভয়ে , যদি অন্য কেউ ধরে বকা দেয়।
মেঘ বালিকাঃ ভিতুর ডিম। তা এখন ফোন বন্ধ কেন?
নীড়ঃ আমার তো ফোন নেই। সিমটা কম্পিউটারে লাগিয়ে কল দেই। নার্স আপুটার সিম উনাকে দিয়ে দিছিতো।
মেঘ বালিকাঃ যাও এখন নিয়ে আসো আমি তোমার সাথে কথা বলবো।
নীড়ঃ উনি তো এখন আর আসবেননা।

রাত ৮টার দিকে ভুমিকম্প হয়েছিল। তখন থেকে ইন্টারনেট তেমনটা কাজ করছিলনা। এখন ইন্টারনেটের সমস্যার কারনে শেষ ম্যাসেজটা সেন্ট হচ্ছিলনা। অনেক বার ট্রাই করার পরে সেন্ট হলো।
কিন্তু মেঘ বালিকার কোন ম্যাসেজ আসছিলনা। ম্যাসেজ না আসার কারন ইন্টারনেট একেবারেই কাজ করছিলনা।
২০ মিনিট চলে এখনো ইন্টারনেট কাজ করছেনা।
নীড় বিরক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। হাত দিয়ে তার বালিশের পাশে রাখা বইটা নিতে গিয়ে হাতের নিচে কিসের একটা ছোট টুকরা হাতে লাগলো। সে হাতে নিয়ে দেখলো এটা নার্স আপুর সিমটা।
নীড় হুটহাট করে উটে গিয়ে মডেমে সিমটা লাগিয়ে কম্পপিউটারে সেট করেই মেঘ বালিকাকে কল দিল।
নীড়ঃ হ্যালো।
মেঘ বালিকাঃ হ্যালো তুমি সিম কোথায় পেলে?
নীড়ঃ নার্স আপুটা ভুলে আমার বিছানায় ফেলে গেছেন।
মেঘ বালিকাঃ থ্যাংস নার্স আপুনি অনেক অনেক থ্যাংস।
নীড়ঃ বোকা মেয়ে নার্স আপু কি তোমার থ্যাংস শুনতে পাবে। আর আপু তো ইচ্ছে করে সিমটা দিয়ে যাননি। ভুলে ফেলে গেছেন।
তসলিমা নাসরিনঃ শুনলে শুনুক না শুনলে নাই আর ভুলে হোক আর ইচ্ছে করে হোক আমি থ্যাংস দিছি উনাকে। তাতে তোমার সমস্যা কি? অল্প কিছুক্ষন কথা বলতেই লাইন কেটে গেল।
কল কাটার সাথে সাথে মেঘ বালিকার কল চলে আসলো। রিসিভড করে আবার দুজন কথা বলতে শুরু করে দিলো। কাল কিভাবে কোথায় দেখা করবে সব আলোচনা করে নিলো। এভাবেই চলতে থাকলো কথা পিটে কথা। মেঘ বালিকার এক সিমের টাকা শেষ হলো তারপর অন্য সিম দিয়ে কল করলো। রাত ৪টা পর্যন্ত কথা বললো তারা দুজন।

সকাল আটটা বাজে এখনো ঘুম থেকে নীড় উঠেনি দেখে তসলিমা নাসরিন দারোয়ানকে বললেন যাওতো নীড়কে যাগিয়ে দাও। তবে উনি যেন বুঝতে পারেননা যে তুমি ইচ্ছে করেই তাকে জাগিয়ে দিচ্ছি। দারোয়ান আচ্ছা মেডাম বলেই নীড়ের দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো মেডাম ৮টা বাজে ৮টা বাজে। আমার ডিঊটির টাইম শেষ আমি চলে যাচ্ছি। দারোয়ানের চিৎকার শুনে নীড় লাফ দিয়ে উঠে দেওয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা ৩মিনিট হয়ে গেছে। খুব তারাহুরা করে দাত ব্রাশ না করে শুধু কুলি করে নিয়ে খয়েরী সর্ট পাঞ্জাবিটা পরে পেনটাও পাল্টে নিলো। রাতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট কানেকশন অন রেখে ঘুয়ে পরেছিলো তাই হুট করেই মেঘ বালিকাকে শুভ নববর্ষ ম্যাসেজ দিয়েই কম্পিউটার অফ না করেই ডাইরেক্ট মাল্টি প্লাগের সুইচটা অফ করে দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে দেখে কেছি গেইটা খোলা। দারোয়ানটাও নেই। সে ভাবলো সম্ভবত রাতের দারোয়ানটা ৮টায় চলে গেছে ভুলে গেইটটা খোলা রেখে। সকালের দারোয়ানটা এখনো আসেনি। সে উকিজুকি দিয়ে ধীরেধীরে গেইটের কাছে আসতেই দেখে কেউ নেই। সাহস করে দুতলার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমেই দেয় ভূ দৌড়। কারন তার হাতে সময় নেই। ৮টায় টেইন সে ইন্টারনেট গেটে জেনেছে।কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। জানেনা সে ট্রেইন এখন পাবে কিনা। মেইন রোডে উঠেই দেখলো একটা রিক্সা আসছে তার দিকে। তার সামনে এসে থামলো। রিক্সা ওয়ালা বললো কই যাবেন?
নীড়ঃ রেল স্টেশন।
রিক্সা ওয়ালাঃ উডেন।
নীড়ঃ আমার কাছে টাকা নেইযে।
রিক্সা অয়ালাঃ হেইডা পরে দেহুমনে। আগে উডেন দেহি। এমনেই বেজায় লেইড হইয়া গেছে। টেরেইন পাই কি নাপাই আল্লায় জানে।
রিক্সা ওয়ালার ট্রেন পাই কি নাপাই কথাটা শুনে নীড় ভাবনার আর সময় নিলনা লাফ দিয়ে রিক্সায় উটে রিক্সা ওয়ালাকে বলল চালু চলেন।

রেল ষ্টেশন এসে রিক্সা ওয়ালা ট্রেন লাইনে দাড়ানো দেখে বললো- কপাল ভালা টেরেইন আইজ দেরিতে আইছে।
নীড় চালু করে রিক্সা থেকে নেমে গিয়ে রিক্সা ওয়ালার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো- আমার কাছে টাকা তো নাই।
রিক্সা ওয়লাঃ টাকা লাগবোনা। আগে গিয়া টেরেইনে উডেন।
নীড়ঃ আপনি অনেক ভাল। যাই তবে। ভাল থাকবেন।
রিক্সা ওয়লাঃ দোয়া কইরেন ভাইজান। আস্তে আস্তে বলতে লাগলেন পাগলের দোয়া কবুল হয়।
নীড় আচ্ছা বলে ষ্টেশনের ভিতরে চলে গেল।

নীড় ধারনাও করলোনা যে রিক্সাটা তার নার্স আপু আগেই তার জন্য টিক করে রেখেছিলেন।

ট্রেনের কাছে এসে একটু দূর তাকিয়ে দেখলো হাসপাতালের দারোয়ান দাড়িয়ে আছে শেষ বগিরটার দরজায় । নীড় অনেকটা ভয় পেয়ে চালু করে ট্রেনে উটে পরলো। যাতে দারোয়ান তাকে দেখতে না পায়। নীড় জানেনা সে যে বগিতে উঠেছে সেটা ঙ বগি। তার জানার কথাও না। কারন সেতো আর টিকেট কেটে উঠেনি। সে যে বগিটা সামনে পেয়েছে সেটাতেই উটে পরেছে।
ট্রেনে উটে নীড় দেখলো একটা মাত্র সিট খালি। সে এই খালি সিটটায় বসে পরলো। নীড় জানেনা যে সে যে সিটটায় বসেছে সেটা তার নার্স আপুর কেটে দেওয়া টিকেটের ২১ নাম্বার সিট।

ট্রেন আসতে আসতে চলতে লাগলো। নীড় দেখল টিটি তার দিকেই আসছেন।
সে তার ট্রেনের বড় অফিসার বন্ধুর পরিচয় দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
টিটি তার সামনে আসতেই সে দাড়িয়ে টিটিকে তার বন্ধুর পরিচয় দিতে যাতেই টিটি মুচকি হাসতে হাসতে বললেন কোন সমস্যা নেই আমি আছি। স্যার আমাকে ফোন করে বলে দিয়েছেন যে আপনি আজ এই ট্রেনে চরে ঢাকা যাচ্ছেন। আপনার কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আর এই সীটটা আপনার আপনি এই সিটে বসেই ঢাকা যাবেন।
নীড় টিটিকে থ্যাংস দিল। টিটি ওয়েলকাম বলে অন্য দিকে চলে গেলেন।

ট্রেনটা দ্রুত গতিতে ছুটছে। নীড় অন্যান্য সীটের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় সব গুলি সিট খালি। কিন্তু সে কিছুক্ষন আগেই নিজের চোখে দেখেছে সব গুলি সিটে মানুষ বসা শুধু তার সীটটা বাধে। নীড় কিছুতেই বুঝতে পারলোনা যে এটা তার নার্স আপুর দারোয়ানকে শিখিয়ে দেওয়া একটা কৌশল। দারোয়ান ষ্টেশন থেকে ছিন্যমুল লোকদেরকে ভাড়া করে এনে যে সিট গুলি দখল করেছিল রেখেছিল শুধু ২১ নাম্বার সিট খালি রেখে। যাতে নীড় এসে ২১ নাম্বার সিটেই বসে।


নীড় কমলাপুর স্টেশনে নেমে বাহিরে এসে স্টেশনের উপর দিয়ে যে অভার ব্রীজটা আছে সেটা দিয়ে খুব সহজেই বৌদ্ধ মন্দিরের মোরে চলে গেল। মেঘ বালিককে এখানেই তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে সে। কারন মেঘ বালিকার বাসা তালতলা। তালতলা থেকে এই জায়গাটা খুব কাছেই নীড় জানে। নীড়ের ঢাকার প্রায় সব গুলি রাস্তা পরিচিত। কারন নীড় এক সময় সারাটা ঢাকা শহর সুরঞ্জনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে।

নীড় মেঘ বালিকাকে বলেছিল সে দুপুর ২টা ২০মিনিটে ঢাকা পৌছাবে। কিন্তু এখন সময় ৩টা ২৫ মিনিট। ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় ১ঘন্টা পরে এখানে পৌছেছে। যদিও ট্রেন দেরি করার জন্য আজ সে ট্রেনটা ধরতে পেরেছিল।
নীড় আসার সময় পেন্টের পকেটে মেঘ বালিকার মোবাইল নাম্বারটা লিখে নিয়ে এসেছিল। নাম্বারটা যদিও তার মুখস্ত কিন্তু সে খুব ভুলা মনের মানুষ তাই লিখে নিয়ে এসেছে । তার মনে ছিলনা যে সে নাম্বারটা পেন্টের পকেটে রেখেছে। তাই মন ভুলে পাঞ্জাবির পকেটে হাত ডুকাতেই অনেক গুলি টাকার মতো কাগজ অনুভব করলো। বেপক উৎসাহ নিয়ে হাতটা বের করে দেখল এটা টাকা মতো নয়, সত্যি টাকা। সে এখন ঠিকি বুঝে গেল এটা তার নার্স আপুটির কাজ। মনে মনে সে তার নার্স আপুটিকে ধন্যবাদ দিলো। টাকা পাওয়ার পর তার খুব খিদা অনুভব হলো। কিন্তু একটু আগেও সে তার খিদা অনুভব করেনি। সে ডানে বামে তাকিয়ে খাওয়ার হোটেল খুজতে লাগলো। একটি হোটেল দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল।হোটেলের পাশেই একটি ফ্লেক্সি লোড এর দোকান দেখতে পেল। পকেট থেকে নাম্বারটা বের করে নিয়ে ফ্লেক্সি দোকানদারকে নাম্বারটা দিয়ে উনার ব্যবসায়ী মোবাইল দিয়ে কল লাগিয়ে দিতে বললো। উনি বললেন এখানে ব্যবসায়িক মোবাইল নেই। নীড় বলল আমার কল করাটা খুব জরুরি। কিন্তু আমার কাছে কোন মোবাইল নেই। দোকানদার নীড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তার বিনয় ভাবটা দেখে উনার পকেট থেকে মোবাইল বের করে নীড়ের কাগজে লেখা নাম্বারটায় কল লাগিয়ে নীড়ের হাতে দিলেন। নীড় মোবাইলটা হাতে নিয়ে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে মেঘ বালিকা বলল- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
নীড়ঃ ওয়ালাইকুম সালাম। কোথায় তুমি? আমি তো তোমাকে খুজে পাচ্ছিনা?
মেঘ বালিকাঃ আমি তো বাসায় তোমার ফোন কল এর আশায় আছি। তুমি চলে এসেছো?
নীড়ঃ হে আমি তো বৌদ্ধ মন্দিরের মোরে দাঁড়িয়ে আছি।
মেঘ বালিকাঃ তুমি আপন কফি হাউজে আসো। আমিও আসছি।
নীড়ঃ আচ্ছা আমি আসছি। ওহে শুনো আমার কাছে টাকা আছে। নার্স আপুটা মনে হয় আমাকে পাঞ্জাবিটার সাথে পাঞ্জাবির পকেটে টাকা দিয়ে দিছে। আমি কিন্তু রিক্সা নিয়ে আসছি। তুমি তারাতারী চলে আসো।
মেঘ বালিকাঃ আচ্ছা। বায়। বলেই লাইন কেটে দিলো।
নীড় দোকানদারকে মোবাইলটা দিয়ে কল করার বিল দিতে গেল। কিন্তু দোকানদার টাকা নিলেননা। বললেন যে এটা উনার ব্যবসায়ীক মোবাইল না পারসোনাল মোবাইল।
নীড় আর জোরাজোরি না করে রিক্সা নিয়ে চলে গেল আপন কফি হাউসে।

নীড় কফি হাউসের সামনে দাড়িয়ে চারদিকে মেঘ বালিকাকে খোজতে লাগলো। নীড় কিন্তু মেঘ বালিকাকে দেখলেই চিনতে পারবে। কারন মেঘ বালিকা খুব সুন্দর ছবি আঁকে। মেঘ বালিকা ভিবিন্ন ছবি একে নীড়কে ফেইসবুকে ম্যাসেজ করে দিতো। সেই ছবি গুলির মধ্যে মেঘ বালিকার নিজের অনেক গুলি ছবিও ছিল। সে ছবি গুলি কারনেই নীড় খুব সহজেই মেঘ বালিকাকে চিনে নিতে পারবে।

খুব মনোযোগ দিয়ে নীড় মেঘ বালিকাকে খোজতে লাগলো। নীড়ের পিছন দিকে কফি হাউজের ভিতর থেকে  মেঘ বালিকা বলে উঠলো এই যে এখানে আমি।
নীড় পিছনে তাকিয়ে দেখলো একেবারেই মেঘ বালিকার আঁকা ছবির মতোই বাস্তব মেঘ বালিকার চেহারা। কিন্তু নীড় খুব অবাক এই ভেবে যে মেঘ বালিকা তো তার কোন ছবি দেখেনি তবে সে তাকে চিনলো কি করে। নীড় তার বিস্ময় দূর করার জন্য মেঘ বালিকাকে বলেই ফেললো তুমি আমাকে চিনলে কিভাবে?
মেঘ বালিকাঃ যাকে ভালবাসি তাকে না দেখেই রঙ তুলি ছাড়া মনে একে রেখেছি। বলেই হাসতে লাগলো। নীড় মেঘ বালিকার মুগ্ধকর হাসি দেখে নিজেই হেসে উঠল। নীড় মেঘ বালিকাকে না দেখে যতোটা প্রেমে পরেছে দেখে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশী প্রেমে পরে গেল। নীড় খেয়াল করে দেখল মেঘ বালিকাও খয়েরী রঙের শাড়ি পরে এসেছে। মেঘ বালিকা এমনিতেই অনেক সুন্দরী কিন্তু খয়েরী রঙের শাড়িটা মেঘ বালিকাকে আরো অনেক বেশী সুন্দরী করে তুলেছে। নীড় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মেঘ বালিকার দিকে। মেঘ বালিকা একটা চেয়ারে বসে দেখলো নীড় এখনো দাঁড়িয়ে থেকে তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেঘ বালিকা নীড়ের মনযোগকে স্বাভাবিক করতে হ্যালো মিস্টার বলে ডাক দিতেই নীড় লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে মেঘ বালিকার বিপরীত চেয়ারে বসে পরলো।
মেঘ বালিকাঃ তা কি খাবে? আমি কোল্ড কফি। তুমি?
নীড়ঃ আমার সুপার হট কফি।
মেঘ বালিকাঃ (ওয়েটারকে ডাক দিয়ে) একটা কোল্ড কফি আর একটা হট কফি, না না হট নয় সুপার হট কফি বলেই নীড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব জোরে হেসে উঠলো। নীড় না হেসে পারলোনা। কারন হাসি তো ছোয়াছে রোগের মতোই।

মেঘ বালিকাঃ তা কেমন আছো?
নীড়ঃ একে বারেই সুস্থ। একেবারে আগের মতোই। খুব স্বাভাবিক মানুষের মতো।
মেঘ বালিকাঃ হ্যা তা আমি জানী।
নীড়ঃ এটা একমাত্র তোমারই অবদান।
মেঘ বালিকাঃ আসলে তা না। এর জন্য তোমার সইচ্ছারই সব চেয়ে বেশী অবদান। যদিও আমারো কিছু অবদান আছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশী অবদান তোমার মা, তোমার নার্স আপু, ডাক্টার রকিব, সহ পাবনা মানষিক হাসপালের সব ডাক্তার নার্স এবং দারোয়ানের।
নীড় অবাক হয়ে মেঘ বালিকাকে প্রশ্ন করলো কিন্তু কিভাবে তাদের অবধান?
মেঘ বালিকাঃ তোমার মা তোমার সকল খরচ বহন করেছেন। মেডিকেল খরচ বহন করেছেন তা তো তুমি জানো। কিন্তু তার বাহিরে যেমন তোমার পরনের তোমার এই খয়েরী সর্ট পাঞ্জাবি তোমার মা নার্স আপুকে টাকা দিয়ে কিনিয়ে দিয়েছেন। তুমি যে রিক্সা করে এসেছো সেটার ভাড়াও তোমার মা নার্স এর মাধ্যমে দিয়েছেন। তুমি ট্রেনে সিটে বসে এসেছো সেই সীটটাও কিন্তু তোমার মা নার্সের মাধ্যমে কেটে দিয়েছেন। এবং কি তোমার পাঞ্জাবির পকেটে যে টাকা তুমি পেয়েছো সেটাও কিন্তু তোমার মা নার্সের মাধ্যমে দিয়েছেন।
নীড়ঃ এত্ত কিছু হয়ে গেল আমি কিছুই টের পেলামনা। আচ্ছা ডাক্টার নার্স দারোয়ানের অবদানটা কি তবে?
মেঘ বালিকাঃ তুমি যে প্রেমে পরে আবার সুস্থ হয়ে উঠবে সেটা কিন্তু ডাক্তার রকিব বুদ্ধি করে বের করেছিলেন। এবং সবার সাথে তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এবং কি তোমার মাকেও ফোন করে জানিয়ে ছিলেন। নার্স আপু তোমার সাথে বন্ধুর মতো মিসেছেন। তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। সেদিন যে সিমটা তুমি বলেছিলে নার্স আপু ভুল করে ফেলে গেছেন। সেটা কিন্তু তিনি ভুল করে ফেলে যাননি ইচ্ছে করেই রেখে গিয়েছিলেন। আর দারোয়ান তোমাকে সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যই চিৎকার করে বলে ছিলো ৮টা বাজে আমার ডিউটি শেষ আমি চলে গেলাম। তারপর উনি তুমি পালাবে বলেই গেইট খুলে রেখে ছিলেন। এবং কি তোমার জন্য রাস্থায় রিক্সা রেডি করে রেখেছিলেন। তুমি যখন রিক্সায় চরে স্টেশন আসো দারোয়ান তখন অন্য পথ দিয়ে স্টেশন চলে এসে ইচ্ছে করেই চ বগিতে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যাতে তুমি তাকে দেখে ভয় পেয়ে ঙ বগিতে উঠো। এবং কি তোমার মনে আছে, তুমি ঙ বগিতে উঠে দেখে ছিলে একটি সিট ছাড়া সব গুলি সিটে লোক বসা ছিল। খালি সিটটা হলো তোমার জন্য নার্স আপুর কাটা ২১ নাম্বার সিটটা। আর বাকী সিট গুলি কিন্তু ট্রেন ছাড়ার পর খালি হয়ে গিয়েছিল তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই। খালি হওয়ার কারন ঐ লোক গুলিকে দারোয়ান ভাড়া করে এনে বসিয়ে ছিল শুধু ২১ নাম্বার সিটটা খালি রেখে যাতে তুমি ঐ ২১ নাম্বার সিটটাতেই বসো। টিটি যখন বলেছিলেন উনার স্যার উনাকে বলে দিয়েছেন যে আজ তুমি ঐ ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছ । নিশ্চই তুমি অবাক হয়েছিলে টিটির কথা শুনে। কারন তোমার বন্ধু তো জনার কথা নয় তুমি পাবনা থেকে পালিয়ে ঢাকা যাচ্ছ। আসলে তোমার মা নার্সকেই এই কথা বলে দিয়ে ছিলেন। আর নার্স দারোয়ানকে আর দারোয়ান টিটিকে বলে দিয়েছিলেন।

নীড় এক পলকে মেঘ বালিকার কথা গুলি শুনছিল। আর অবাক হচ্ছিল তাদের এই পরিকল্পনার কথা শুনে। নীড় মেঘ বালিকার কথা গুলি শুনে অনুভব করতে পারছে সে কতটা অসুস্থ ছিলো এতো গুলি দিন। এত্ত সাজানো গোছানো পরিকল্পনা নীড় একটু বুঝতে পারেনি। কেন পারেনী সে নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করছে। আবার নিজেই ভাবছে তবে কি আমি সত্যি সত্যি পাগল ছিলাম। নীড়ের শরিটটা হালকা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।
মেঘ বালিকা সেটা খেয়াল করলো।
মেঘ বালিকাঃ তুমি ঠিক আছো?
নীড়ঃ নিশ্চয়ই আমি ঠিক আছি।
ওয়েটার এতক্ষনে কফি নিয়ে আসলো ।
মেঘ বালিকাঃ এতো লেট এর কারন কারন কি?
অয়েটারঃ সরি ম্যাম স্যার সুপার হট কফি বলেছিলেন তাই একটু বেশী সময় লেগেছে।
সাথে সাথে নীড় আর মেঘ বালিকা এক সাথে সুপার হট কফির কাঁপটাতে ধরে সুপার হট এর তাপ অনুভব করেতে গিয়ে দুজন দুজনের হাতের স্পর্শ পেল। মেঘ বালিকা কফির কাপ অতিরিক্ত গরম এবং নীড় এর হাতের স্পর্শ থেকে মুক্তি নিতে হুট করে হাতটা সরিয়ে নিল।
নীড়ও তাই তার হাতটা সরিয়ে নিলো।

নীড় বাম হাতে কফির কাপের ফিঙ্গার রিং এ ধরে মুখের কাছে তুলে মেঘ বালিকাকে বলল- আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পারি।
মেঘ বালিকাঃ কেউ একজন হিংসে করবে যে।
নীড় খুব চলকালো কথাটা শুনে। ডানে বামে তাকিয়ে সে কি যেন খুজতে লাগলো। নীড় নিজেও জানেনা সে কি খুজছে।
নীড় খুব বিনয় ও শান্ত সুরে মেঘ বালিকাকে প্রশ্ন করলো-কে সে?
মেঘ বালিকাঃ তোমার এই সুস্থ হওয়ার পিছনে আরো দুজনের অবদান আছে।
নীড়ঃ আমার উত্তর পাইনি তোমার হাত ধরলে কে হিংসে করবে সেটা আগে বলো? তারপর দুজন কারা তারা? আমি তো কাউকে মিন করতে পারছিনা।
মেঘ বালিকা আপন কফি হাউজের কোনার কেবিনটা দেখিয়ে বলল ঐ যে দুজন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, তারাই সেই দুজন।
নীড়ঃ কিন্তু আমি তো ঐ ভদ্রলোক আর বাচ্ছাটাকে চিনিনা।
মেঘ বালিকা হাতের ইশারায় ঐ ভদ্রলোক আর বাচ্ছাটাকে ডেকে নীড়ের উদ্যেশ্যে বলল- আসলে তোমার চিনার কথা নয়।
মেঘ বালিকা ভদ্র লোকটির হাতে ধরে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- উনিই হিংসে করবেন। কারন উনি আমার স্বামী। আর বাচ্চাটারকে আদর  করতে করতে বলল এ আমার সোনা জাদু একমাত্র সন্তান বর্ণ। ওরা আমাকে অনেক সময় ও সুযোগ করে দিয়েছে তোমাকে সুস্থ করে তুলার জন্য। তোমার নার্স আপুই তোমার আগে আমার সাথে কথা বলে সব বুজিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে কি করতে হবে। মেঘ বালিকা তার স্বামী সন্তানের দিকে তাকিয়ে কথা গুলি বলছিল তাই সে দেখতে পারলনা নীড়ের কাপ থেকে সুপার হট কপি গুলি নীড়ের বুকের উপর পরছে টেপের পানির মতো কলকল করে।
বর্ণ দেখতে পেয়ে তার মাবার উদ্যেশ্যে নীড়ের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে চিৎকার করে বলল আংকেল।
সাথে সাথে মেঘ বালিকা আর তার স্বামী দেখতে পারলো নীড় অচেতন হয়ে বসে আছে তার হাতের কফির কাপ থেকে সুপার হট কফি গুলি তার বুকের উপরে পরছে। মেঘ বালিকা ও তার স্বামী নীড়কে চিৎকার দিয়ে ধরতেই নীড় কাঠের চেয়ারটা নিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।
মেঘ বালিকার ও তার স্বামী সন্তানের চিৎকার শুনে পাশের বড় কেবিন থেকে নীড় এর মা দুই বোন তাসলিমা রহমান ডাক্তার রকিব বেড়িয়ে এলেন। তারা এসে দেখলেন নীড় মেঘ বালিকার কোলে মাথা রেখে ফ্লোরে পরে আছে। নীড় এর মা বোন হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে এসে নীড়কে ধরে ঝাকিয়ে কাদতে লাগলেন। মেঘ বালিকার চোখের পানি তার অজান্তে নীড়ের বুকে পরছিল ফোটা ফোটা হয়ে। শিতল করে দিচ্ছিলো নীড়ের বুক সুপার হট কফির পোড়া দহনের যন্ত্রনা থেকে। বর্ণও খুব কাদছিল। বর্ণ কেন কাদছিল যদিও সে জানে। কিন্তু কার জন্য কাদছিল সে জানেনা।

ডাক্তার রকিব নার্স তশলিমা রহমানকে ডেকে বললেন তারাতারী ইনজেকশন রেডি করুন। এখনি উনাকে ইনজেকশন দিতে হবে। ডাক্তার রকিব আর তসলিমা রহমান আগে থেকে এই ধরনের সমস্যার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। নার্স ইঞ্জেকশন রেডি করে ডাক্তার রাকিবের হাতে দিয়ে নীড়ের বাহুতে ধরতেই নীড় নরে উঠলো। ডাক্তার ইনজেকশন না দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন পূর্ণ জ্ঞান ফেরার।
নীড় উঠে বসলো। সবাই তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে খুব অবাক হলো। ভিতু ভিতু কন্ঠে সে সবাইকে বলতে লাগলো আপনারা কারা? আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি এখানে কেন?
নীড়ের মা কাদতে কাদতে বললেন নীড় বাবা আমার, আমি তোর মা। এই যে তোর দুই বোন বাবা। তুই আমাদের চিনতে পারছিসনা।
নীড়ঃ না তো আমি তো আপনাদের চিনিনা। মা কি? বোন কি আমিতো জানিনা?
নীড়ের মা বোন চিৎকার করে কাদতে লাগলেন। চিৎকার করে কাদতে লাগলো মেঘ বালিকা আর তার ছেলে। তার স্বামী রুমাল দিয়ে বারবার নিজের চোখের জল মুচলে লাগলেন।
তসলিমা নাসরিন বুজতে পারেননি যে তার চোখেও অঝরে জল ঝরছে। কিন্তু তিনি দেখলেন ডাক্তার রকিবের চোখের জলে উনার সাদা সার্টে দাগ ফেলে দিয়েছেন।
নীড় সবার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে বলে উঠলো আজ পহেলা বৈশাখ, আজ পহেলা বৈশাখ। আজ আমার সুরঞ্জনাকে খুজতে হবে, আজ আমার সুরঞ্জনাকে খুজতে হবে।
ডাক্তার রাকিব বুঝতে পারলেন নীড় সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে শুধু কিছু বিশেষ স্মৃতি ছাড়া। আর সে বিশেষ স্মৃতি গুলি হচ্ছে সুরঞ্জনার স্মৃতি। ডাক্তার রকিব আরো বুঝতে পাড়লেন নীড় আগে যতোটা মানষিক অসুস্থ ছিল এখন তার চেয়ে অনেক গুন বেশী অসুস্থ হয়ে পরেছে। তিনি বুঝতে পাড়লেন নীড় এখন পূর্ণ পাগল রাস্তার আট দশটা পাগলের মতোই পাগল।

নীড় উঠে দাঁড়াল আর চারদিক একবার তাকিয়ে দেখলো। বুঝা যাচ্ছে সে যেন কি খুজছে। একটা জায়গায় গিয়ে তার চোখ আটকে গেল।
আর সেটা হচ্ছে দেয়াল ঘড়ি। সে ঘরির দিকে অনেকক্ষন এক ধেনে তাকিয়ে থাকলো। সম্ভবত সে এখন কয়টা বাজে বুজার চেষ্টা করছে।
সবাইও তার মতো ঘরির দিকে তাকিয়ে থাকলেন এই ভেবে যে নীড় আসলে কি দেখছে।
নীড় ৫টা বাজে, ৫টা বাজে বলে চিৎকার করে দৌড়ে কফি হাউজ থেকে বেড় হয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো এখন আমার সুরঞ্জনা কে খুজতে হবে এখন আমার সুরঞ্জনাকে খুজতে হবে। বলেই শুধু দৌড়াতে লাগলো। সবাই তার পিছনে দৌড়ে গেল। নীড়ের দৌড়ের গতি এতোটাই বেশী ছিল যে একটা সময় সে অনেক মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গেল। হারিয়ে গেল তার খুব চেনা তার মা, বোন, নার্স, আপু, মেঘ বালিকা, থেকে। এখন সে বেওয়ারিস কুকুরের মতোই ঘুরে বেড়াবে পথে পথে। আর ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো খুজবে সুরঞ্জনাকে। শুধু সুরঞ্জনাকে ।

                                                                               সমাপ্ত