সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৬

‘আবারো ধর্ষণ” এর জন্য দায়ী কে বা কারা?


তনু ধর্ষণ ও হত্যার আসামি ধরার আগেই আবারো ধর্ষণ।

গত রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিনিময় পরিবহনের বাসে এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণের করে বাস চালক ও তার সহকর্মীরা।
আজ প্রতিটি অনলাইন নিউসে দেখা যাচ্ছে হাইলাইটস আকারে এই নিউসটা।
কেন এতো ঘনঘন ধর্ষণ এর ঘটনা গঠছে?
কেন ধর্ষণটা আমাদের দেশে মহামারী আকার ধারণ করছে।
এর জন্য কে বা কারা দায়ী?
আমার মতে এর জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী অকার্যকর বিচার ব্যবস্থা।



তনু ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে দেশ জোরে এতো মাতামাতি, এতো এতো আন্দোলনের মাঝেও কি ভাবে এতো সাহস হয় দুঃখিত সাহস নয় দুঃসাহস হয় ধর্ষণ করার।
কেন আইনের ভয়ে ধর্ষকরা ভিতু হয়ে উঠেনি?
কেন বুক কাপেনি ধর্ষকদের ধর্ষণের শাস্তির কথা ভেবে।
কেন কেন কেন?

এই ধর্ষণের ভয়ে কেন নারীরা ঘর কোণ হয়ে পরছে আবার সেই মূর্খ সমাজের মূর্খ মানবের মতো। এই সভ্য যোগের অসভ্য আচরণের নারীরা আবার বন্ধি হচ্ছেন চার দেয়ালের মাঝে। কেউ কেউ নিজেকেই নিজে বন্ধী করে নিচ্ছেন। কাউকে আবার অবিভাবকরা বন্ধী করে রাখছেন।
কেন রাখছেন? কিসের ভয়ে?
জানী এই প্রশ্নের উত্তর কারো অজানা নয়।

এই তো কয়েক বছর আগেই আমাদের মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পেত।
অবিভাবক মেয়েদেরকে ঘরের বাহিরে স্কুল কলেজ শপিং কিংবা আত্বীয় স্বজনদের বাড়ি পাঠাতেও ভয় পেতেন।
বলতে পারবেন কিসের ভয় পেতেন তখন?
জানী বলতে পারছেন না কেউ। কারন ভুলে যাওয়াটা আমাদের জাতীগত সমস্যা।
আর আপনাদের কষ্ট করে মনে করা লাগবেনা আমিই মনে করিয়ে দিচ্ছি।
সেই ভয়টা ছিল যৌন নির্যাতন বা ইভটিজিং এর ভয়।
কই এখন তো মেয়েরা বা অবিভাবকরা সেই ভয় তো আর পাননা।
কেন পাননা?
কারন যৌন নির্যাতন বা ইভটিজিং এর বিচার মোটামুটি কার্যকর হয়েছে।
যৌন নির্যাতন বা ইভটিজিং এর বিচার পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে বলে আমি স্বীকার করতে পারিনা।
জানী আপনারো স্বীকার করতে পারবেন না।
আমি আগেই বলেছি ভুলে যাওয়া আমাদের জাতীগত সমস্যা।
একটা সমস্যার সৃষ্টি হলেই আমারা আগের সমস্যাটা ভুলে যাই।
তাই গত বছরের একটা সমস্যার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনাদের।

জি আমি গত বছর প্রহেলা বৈশাখের কথা মনে করাতে চাচ্ছিলাম।
নিশ্চয়ই এখন আপনাদের আমার মতো বুকের বাম পাশের পুরোনা ব্যথাটা অনুভব করছেন।
জানী গত বছর প্রহেলা বৈশাখে আমার মতো আপনাদের ও বুকের বাম পাশে ব্যাথা উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নির্যাতনের সংবাদ শুনে।
কেউ মেনে নিতে পারছিলেননা এমন একটা জায়গায় এমন একটা দিনে এমন ঘটনার।

আমরা আমজনতারা সেদিন খুব চিল্লাইছিলাম বিচার চাই বিচার চাই বলে।
লাগাতার অনেক দিন চিল্লাইয়াও বিচার পাইলামনা।
তাহলে আপনারা বলেন কি ভাবে স্বীকার করি যে, যৌন নির্যাতন বা ইভটিজিং এর বিচার পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে।
না না না আমি কোন ক্রমেই স্বীকার করতে পারবোনা।

এই কয়েক মাস আগেই আমাদের মাননীয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পহেলা বৈশাখে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘তেমন বিষয় না’ উল্লেখ করেছিলেন।
তখন উনার পাশে কয়েক জন খ্যাতিমান নারী বসা নিচের অতিথির আসনে।
কই সেদিন তো আমাদের ঐ খাতিমান নারীরা উক্ত অনুষ্টানে মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি।
কেন করেননি?
প্রশ্ন ঐ খ্যাতিমান নারীদের যারা সেই অনুষ্টানে মন্ত্রীর পাশে বসা থেকেও মন্ত্রীর এমন কথার প্রতিবাদ করেননি।
যদি এই লেখার পাঠকদের মধ্যে ঐ নারীদের  কেউ হয়ে থেকে থাকেন তবে আশা রাখি উত্তরটা দিয়ে দেবেন।

মাননীয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর এমন উদ্ভট বক্তব্যের প্রতিবাদ উক্ত অনুষ্টানে খ্যাতিমান নারীরা না করলেও করেছিল এক ঝাক তরুন তরুনী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী পুরুষ। যে যার অবস্থান থেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন যার যার সাধ্য মতো।
অবশেষে মন্ত্রী মহুদয় উনার বক্তব্যের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

আমার কয়েক দিন যাবত আমার বুকটা ভয়ে খুব কেপে কেপে উঠে।
কেন উঠে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই আপনারাও।
জি ঠিক ধরছেন কয়েক দিন পরেই আমাদের প্রাণের উৎসব আমাদের নববর্ষ।
আগামি কয়েক দিন পরেই প্রহেলা বৈশাখ মনে হলেই আঁতকে উঠি আমি গত বছরের প্রহেলা বৈশাখের কথা মনে করে।
কম্পন শুরু হয় আমার হৃদপিন্ডে। আপনার বুকে হাত দিয়ে দেখুন আমি নিশ্চিত ভয়ে আপনার হৃদপিন্ডও কাপছে।

কেন কাপছে আমি বলে দেই কেমন।
জি আপনার নিরাপত্তার ভয়ে হৃদপিন্ড কাপছে।
কে দেবে এবারের প্রহেলা বৈশাখে আমার নিরাপত্তা, আমার বোনের নিরাপত্তা, কে দেবে আমার মায়ের নিরাপত্তা?
এই কথা গুলিই ভেবেই আমার মতো আপনার হৃদপিন্ড কাপছে।
কি ঠিক বললাম তো?
জানী ভুল বলিনি।

ভয় কি আর আপনি আমি স্বাদে পাই?
এই তো গত কালকে রাতেই একজন নারী ধর্ষিতা হলেন।
আজ থেকে গত এক বৎসরে কত গুলি ধর্ষণ যে হয়েছে এই অদম
গুনে গুনে তা মনে রাখতে পারেনি। যদিও আমার সরণ শক্তিটা খুব দুর্বল।
আর ভুলে যাওয়া তো আমাদের জাতীগত সমাস্যাই। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
এই তো কয়েক দিন আগেই ধর্ষণ করে তনুকে হত্যা করা হয় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে।
যার হত্যার বিচার তো দুরের কথা আসামি ধরা তো দুরের কথা এখনো আসামি সনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনী। জানিনা এ কার ব্যর্থতা। সরকারের নাকী আইন শৃংখলা বাহীনির। নাকী চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কোন কিছুকে। নাকী দিনে দিনে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদেরকে তনু হত্যা আর ধর্ষণ।

দেশে এতো ধর্ষণ হত্যা বেড়ে যাওয়ার সব চেয়ে বড় কারন আমার মতে বিচারহীনতা।
জানী আমার সাথে আপনারাও একমত হবেন। দ্বিমত হওয়ার কোণ বিষয় দেখছিনা।
যে দেশে বিচারহীনতা বাড়বে সে দেশে তো ধর্ষণ হত্যা বাড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এই বিচারহীনতার কারনে এতো হত্যা ধর্ষণ বাড়ছে তবুও বিচার হচ্ছেনা সুষ্ট ভাবে সঠিক অপরাধী সনাক্ত করে।
নাকী সরকার ও আইন শৃংখলা বাহিনী তাদের ব্যর্থতার পরিচয় তুলে ধরছেন আমাদের মাঝে।
আমরা বুঝতে পারছিনা তাদের কর্মের ভাষা।

শুধু আশ্বাস দিয়ে বড়িয়ে দিচ্ছেন আমাদের মন প্রাণ আমাদের সরকার আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
আর আমরাও সব সময় আশাবাদী হয়েই আশাহীন হয়ে পরেও আবার পুনরায় আশাবাদী হয়ে নিজেদের দায় মুক্ত করি।
মুক্ত করি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে।

কোন মন্তব্য নেই: