আমি এক নগন্য মানুষ,তবে জগন্য নয় কিন্তু।
লেখা লেখির অভ্যাস বা বদভ্যাসটা আমার সেই কৈশোর থেকেই।
তবুও লেখক হতে পারলাম না জীবনের প্রায় অর্ধেক আয়ু শেষ করেও।হাহাহাহা..................
কৈশোরে লিখতাম মাগনা পাওয়া ঔষধ কোম্পানির পেডবুকে।
খাতা বা ডাইরিতে লিখার ক্ষমতা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।
খাতাতে লিখলে মা অনেক বকা দিতেন, মাঝে মাঝে বেপক প্রহার ও করতেন।
কারণ অহরত খাতা কলম কিনে দেওয়ার ক্ষমতা আমার মায়ের ছিলনা।
আর ডাইরি কেনা তো সে সময় আমার মায়ের জন্য ছিল এক বিশাল
কষ্ট সাধ্য বেপার, প্রায় অসাধ্য বলাই চলে।
ভাবছেন বাবা কোথায়?
হা হা হা বাবাকে কি বলে ডাকতাম তাও জানিনা।
সম্ভবত আব্বা আব্বা বলেই ডাকতাম।
কারন আমাদের সিলেটে বাবাকে আব্বা বলেই ডাকা হয়।
কিছু কিছু শিক্ষিত ও পয়সা ওয়ালা পরিবারে হয়তো বাবা বা আব্বু বলেই ডাকে।
আমার বাবা শিক্ষিত বা পয়সা ওয়ালা ছিলেন না বলেই আমি ভেবে নিয়েছি,
বাবাকে আমি আব্বা আব্বা বলেই ডাকতাম।
বাবার চেহারাটা মোটেও মনে করতে পারিনা। কি করে মনে করবো?
তখন যে আমি নিজ হাতে ভাত খাওয়াও শিখিনি।
তবে একটা কথা মনে আছে, সেদিন সকালে আমার পায়ে নতুন এক জোরা জুতা
পড়ানো ছিল।
আমি এই নতুন জুতা পা থেকে খুলে একা একাই খেলছিলাম।
কেউ আমায় সঙ্গ দিচ্ছিল না।
সম্ভবত জুতা জোরা বাবা রাতেই কিনে এনেছিলেন।
আমি ছিলাম ঘরের বাড়ান্দায় বসা। মা ঘরের ভিতর হাউ মাউ করে কাদছিল।
কেন কাদছিল তা বুঝার ক্ষমতা বা জ্ঞান তখন আমার ছিলনা।
আমাদের বাসার উঠানে অনেক মানুষ জনের ভিড় ছিল।
একটা চিকন লম্বা খাটের মধ্যে শুইয়ে বাবাকে কারা যেন গোসল করাচ্ছেন।
কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছেন।
দুপুরের দিকে আমার অনেক খিদা লাগাতে আমি কাদছিলাম।
আমাদের আসে পাশের কেউ একজন আমায় কোলে নিয়ে, তিনিও কাদছিলেন।
আমি জানতাম না সেদিন, তিনিও কেন কাদছিলেন।
আমি একবার উনার দিকে তাকাই, আরেক বার নিজের দিকে তাকাই।
উনার কান্না দেখে আমার কান্নার শব্দ ও গতি আরো বেড়ে গেল।
উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে সামনের দিকে আঙ্গুলের ইশারায়
তাকাতে বললেন।
যদিও আঙ্গুলের সাথে মুখেও বলেছিলেন কি যেন।
আমার তখন কথা বুঝার ক্ষমতা বা জ্ঞান হয়নি।
তাকিয়ে দেখি আমার বাবাকে কারা যেন একটা পালকির মতো
কাঠের খাটে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি তখন কান্না থামিয়ে পালকি চরার জন্য চ্যাঁচ্যাঁতে লাগলাম।
উনি আমায় বুকে জরিয়ে ধরলেন। আমি জোর করে উনার বুক থেকে ছুটে
সামনে তাকিয়ে দেখি পালকিটি আর আমার চোখের সামনে নেই।
আমি আবার কান্না শুরু করে দিলাম।
জানি না কতক্ষন কেদেছিলাম সেদিন।
জানতাম না আমার বাবাকে তারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন।
আজ জানি আমার বাবাকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল সেদিন।
কিন্তু আজো জানা হলনা বাবার আদর কেমন?
জানা হলোনা বাবার কবর কোনটা?
বড় হয়ে জানলাম আমার মা -ই বাবা, বাবা-ই মা।
মা-ই অর্থ সম্পদ ঐশর্জ।
ধারিদ্রতার কারনে বেশীদূর পড়াশুনা করতে পারিনি।
হাই স্কুলেই ঝরে গেল আমার শিক্ষা জীবন।
ছাত্র জীবনে সবারই বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য কিছু হবার স্বপ্ন থাকে।
কিন্তু আমার স্বপ্নটা ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম।
যা সেই বয়সে তখন তা হয়তো কল্পনাও করতে পারতো না কেউ।
আমার স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানি হবো।
আমার স্বপ্নটা আমার স্কুল ও প্রতিবেশি বন্ধুরা জানার পর আমাকে ক্ষেপিয়ে,
টিটকারী দিয়ে বলতো "বিজ্ঞানী" "বিজ্ঞানী"।
মাঝে মাঝে বড়রাও বলে খেপাত।
পড়াশুনা ঝরে পড়ার সাথে সাথেই ঝরে গেল আমার বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন।
হয়ে গেলাম আমি স্বপ্নহীন।
আর স্বপ্নহীন মানুষ কখনো জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
আমি তখনো কথাটি জানতাম এবং মানতামও।
তাইতো আজো আমার জীবনে কোন উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি।
হয়ে গেলাম আমি বেকার।
ঘরের টুকটাক কাজ ছাড়া আমার আর কোন কাজ ছিলনা।
খেলা দুলাতে মোটা মুটি আগ্রহ থাকা সত্তেও যেতাম না।
কারন মায়ের বারণ। গরিবের ছেলের খেলাদোলা করতে নেই।
মাঝে মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে খেলতে যেতাম।
সন্ধ্যা বেলা ঘরে ফিরতেই মা বেপক প্রহার করতেন।
মায়ের প্রহার গুলুই আজ আমার শৈশবের প্রধান স্মৃত্বি।
তার পর খেলাদোলা একেবারেই ছেড়ে দিলাম।
শুরু হলো আমার পড়ার প্রতি আগ্রহ।
মুড়ির টোঙ্গা থেকে শুরু করে রাস্তায় কুরিয়ে পাওয়া কাগজ, পত্রিকার ছেড়া অংশ
বাসায় এনে পড়তাম।
মাঝে মাঝে মুদির দোকানের টোঙ্গা বাঁধার পুরাতন বই খুজে নিয়ে এসেও পরতাম।
আবার ফেরত দিয়ে আরেকটা আনতাম পড়ার জন্য।
তখন লাইব্রেরী কি জানতাম না।
শুধু জানতাম লাইব্রেরীতে বই কলম খাতা বিক্রি হয়।
পড়ার ফাকে ফাকে কুড়িয়ে আনা কাগজ গুলির সাদা অংশে মনের ইচ্ছে মতো লিখতাম।
কেউ দেখে ফেললে লজ্জা পেয়ে ছিড়ে ফেলে দিতাম।
সেই থেকেই শুরু পড়ার পাশা পাশি লেখার আগ্রহ।
এক সময় আমি কর্মমুখী হলাম।
মোটামোটি নিজের খরচ চালিয়ে মাকেও আর্থিক ভাবে সামান্য হেল্প করতে পারতাম।
আর অবসরে পুরাতন বইর দোকান থেকে পুরাতন বই কিনে পড়তাম।
পুরাতন বইর দাম কম বল অনেক গুলি এক সাথে কিনে ফেলতে পারতাম।
আর নতুন ডাইরি নোট পেড কিনে লিখতাম।
তখন আমার লেখার পাঠক সংখ্যা ছিল একজন।
আর সে আর কেউ নয় আমি নিজেই।
বন্ধুরা মাঝে মাঝে পড়তো। কিন্তু যতোটা প্রশংসা করতো না তার চেয়ে বেশি
টিটকারি মারত। এই ভাবে অপমানিত হয়ে এক সময় হারালাম লেখা লেখির ভাষা।
লিখতে আর ভালো লাগতো না। তাই পড়াতেও মন বসতো।
পাঠকহীন লেখক কি আর লেখা লেখিতে এগিয়ে যেতে পারে।
এই অতি নগন্য অযোগ্য লেখকের লেখা কি পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে ছাপাবে।
প্রশ্নই আসে না।
এটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নেও সম্ভব না।
তাই আর লেখা লেখি করা হলো না।
মৃত্যু গঠলো আমার লেখক ও পাঠক মনের।
অনেক দিন পড় আমি ফেইসবুক ইউস জানলাম।
তখন ফেইসবুকে চ্যাট অপশনটা ছিলনা।
বাংলা লেখাও যেতনা।
ইংলিশ ফ্রন্টে বাংলা উচ্চারণ দিয়ে ছোট ছোট স্ট্যাটাস দিয়ে আবার লেখা শুরু করলাম।
নতুক করে আবার পাঠক হয়ে গেলাম।
লাইক কমেন্ট শেয়ার দিয়ে শুরু করলাম নতুন এক জগত।
মানে ইন্টারনেট জগত।
তখন কিন্তু শিক্ষিতরাও এই জগতে তেমন একটা পা বাড়াননি।
মোটামোটি পড়তে লিখতে ভালই লাগতো। লাইক কমেন্ড দেখে ভাবতাম
এই বুঝি আমার পাঠক সংখ্যা এক এর অধিক ছাড়িয়ে গেল।
আমার ভুলটা তখনি ভাংলো যখন দেখলাম আমার ইন বক্সে ,কমেন্ট বক্সে
একটাই ম্যাসাজ আসে।
আর তা হলো আমি লাইক কমেন্ট দিলাম আপনি ও আমারটায় লাইক কমেন্ট দেন।
আমার বুঝতে বাকী রইলো না যে এরা আমার লেখার পাঠক না।
তারা শুধু লাইককারী কমেন্টকারী। এরা লাইকের বিনিময়ে লাইক চায়
কমেন্ট এর বিনিময়ে কমেন্ট।
আমি আবার হতাসা ভোগী হলাম।
তাই গুগলে খুজতে লাগলাম এমন একটা লেখার প্লাটফ্রম যেখানে
আমি লিখতে পারবো পড়তে পারবো,সত্যিকারের পাঠক পাবো আর
কুড়াতে পারবো সত্যিকারের প্রশংসা। যা দেবে আমায় লেখার পেরণা।
অনেক দিন খোজার পরেও আমি এমন কোন প্লাটফ্রম খুজে পেলাম না।
গত বৎসর "৫ম বাংলা ব্লগ দিবস" এর নামে একটা পোষ্ট আমার
ফেইসবুক টাইমলাইনে দেখতে পেলাম। পোষ্টের নিচে একটা লিংক পেলাম।
লিংকটা নিউ টেব এ ওপেন করলাম।
পুরাটা পোষ্ট পড়লাম। পড়ার পর কমেন্ট করতে গেলাম।
আমায় ইনফরমেশন দিল যে আমার লগইন করা লাগবে।
তাই আর কমেন্ট করা হলো না।
ওয়েব লিংকটা বুকমার্ক করে রেখে দিলাম। যানিনা কেন জানি সেদিন কেন
এই সাইটটা আমার ভাল লেগেছিল।
সাইটটার নাম আর কিছু না আমাদের "সামওয়ার ইন ব্লগ ডট নেট।
এর পর থেকে আমি প্রতিদিন সামওয়ারে ডুকে পোস্ট পড়া শুরু করে দিলাম।
প্রায় দুই মাস শুধু পাঠক রুপেই ছিলাম সামুর সাথে।
সামুকে মোটামোটি জানলাম বুঝলাম এবং ধারনা নিলাম।
১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪তে নুর ইসলাম রফিক নামে একটা একাউন্ট করে ফেললাম।
১০ মাস ২ সপ্তাহ পর্যন্ত পোস্ট ৬৭টি করেছি,মন্তব্য করেছি ৪৯৭টি,
প্রশংসা পেয়েছি ১৭৬টি, আর পাঠক পেয়েছি ৪৪৭৩ জন।
যা আমার কল্পরার সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে।
তাই সামুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারলাম না।
সামু ভাল থাকুক, ভাল থাকুক সামুর পাঠক লেখক ও বাংলা ব্লগ।
লেখা লেখির অভ্যাস বা বদভ্যাসটা আমার সেই কৈশোর থেকেই।
তবুও লেখক হতে পারলাম না জীবনের প্রায় অর্ধেক আয়ু শেষ করেও।হাহাহাহা..................
কৈশোরে লিখতাম মাগনা পাওয়া ঔষধ কোম্পানির পেডবুকে।
খাতা বা ডাইরিতে লিখার ক্ষমতা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।
খাতাতে লিখলে মা অনেক বকা দিতেন, মাঝে মাঝে বেপক প্রহার ও করতেন।
কারণ অহরত খাতা কলম কিনে দেওয়ার ক্ষমতা আমার মায়ের ছিলনা।
আর ডাইরি কেনা তো সে সময় আমার মায়ের জন্য ছিল এক বিশাল
কষ্ট সাধ্য বেপার, প্রায় অসাধ্য বলাই চলে।
ভাবছেন বাবা কোথায়?
হা হা হা বাবাকে কি বলে ডাকতাম তাও জানিনা।
সম্ভবত আব্বা আব্বা বলেই ডাকতাম।
কারন আমাদের সিলেটে বাবাকে আব্বা বলেই ডাকা হয়।
কিছু কিছু শিক্ষিত ও পয়সা ওয়ালা পরিবারে হয়তো বাবা বা আব্বু বলেই ডাকে।
আমার বাবা শিক্ষিত বা পয়সা ওয়ালা ছিলেন না বলেই আমি ভেবে নিয়েছি,
বাবাকে আমি আব্বা আব্বা বলেই ডাকতাম।
বাবার চেহারাটা মোটেও মনে করতে পারিনা। কি করে মনে করবো?
তখন যে আমি নিজ হাতে ভাত খাওয়াও শিখিনি।
তবে একটা কথা মনে আছে, সেদিন সকালে আমার পায়ে নতুন এক জোরা জুতা
পড়ানো ছিল।
আমি এই নতুন জুতা পা থেকে খুলে একা একাই খেলছিলাম।
কেউ আমায় সঙ্গ দিচ্ছিল না।
সম্ভবত জুতা জোরা বাবা রাতেই কিনে এনেছিলেন।
আমি ছিলাম ঘরের বাড়ান্দায় বসা। মা ঘরের ভিতর হাউ মাউ করে কাদছিল।
কেন কাদছিল তা বুঝার ক্ষমতা বা জ্ঞান তখন আমার ছিলনা।
আমাদের বাসার উঠানে অনেক মানুষ জনের ভিড় ছিল।
একটা চিকন লম্বা খাটের মধ্যে শুইয়ে বাবাকে কারা যেন গোসল করাচ্ছেন।
কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছেন।
দুপুরের দিকে আমার অনেক খিদা লাগাতে আমি কাদছিলাম।
আমাদের আসে পাশের কেউ একজন আমায় কোলে নিয়ে, তিনিও কাদছিলেন।
আমি জানতাম না সেদিন, তিনিও কেন কাদছিলেন।
আমি একবার উনার দিকে তাকাই, আরেক বার নিজের দিকে তাকাই।
উনার কান্না দেখে আমার কান্নার শব্দ ও গতি আরো বেড়ে গেল।
উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে সামনের দিকে আঙ্গুলের ইশারায়
তাকাতে বললেন।
যদিও আঙ্গুলের সাথে মুখেও বলেছিলেন কি যেন।
আমার তখন কথা বুঝার ক্ষমতা বা জ্ঞান হয়নি।
তাকিয়ে দেখি আমার বাবাকে কারা যেন একটা পালকির মতো
কাঠের খাটে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
আমি তখন কান্না থামিয়ে পালকি চরার জন্য চ্যাঁচ্যাঁতে লাগলাম।
উনি আমায় বুকে জরিয়ে ধরলেন। আমি জোর করে উনার বুক থেকে ছুটে
সামনে তাকিয়ে দেখি পালকিটি আর আমার চোখের সামনে নেই।
আমি আবার কান্না শুরু করে দিলাম।
জানি না কতক্ষন কেদেছিলাম সেদিন।
জানতাম না আমার বাবাকে তারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন।
আজ জানি আমার বাবাকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল সেদিন।
কিন্তু আজো জানা হলনা বাবার আদর কেমন?
জানা হলোনা বাবার কবর কোনটা?
বড় হয়ে জানলাম আমার মা -ই বাবা, বাবা-ই মা।
মা-ই অর্থ সম্পদ ঐশর্জ।
ধারিদ্রতার কারনে বেশীদূর পড়াশুনা করতে পারিনি।
হাই স্কুলেই ঝরে গেল আমার শিক্ষা জীবন।
ছাত্র জীবনে সবারই বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যান্য কিছু হবার স্বপ্ন থাকে।
কিন্তু আমার স্বপ্নটা ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম।
যা সেই বয়সে তখন তা হয়তো কল্পনাও করতে পারতো না কেউ।
আমার স্বপ্ন ছিল আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানি হবো।
আমার স্বপ্নটা আমার স্কুল ও প্রতিবেশি বন্ধুরা জানার পর আমাকে ক্ষেপিয়ে,
টিটকারী দিয়ে বলতো "বিজ্ঞানী" "বিজ্ঞানী"।
মাঝে মাঝে বড়রাও বলে খেপাত।
পড়াশুনা ঝরে পড়ার সাথে সাথেই ঝরে গেল আমার বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন।
হয়ে গেলাম আমি স্বপ্নহীন।
আর স্বপ্নহীন মানুষ কখনো জীবনে উন্নতি করতে পারে না।
আমি তখনো কথাটি জানতাম এবং মানতামও।
তাইতো আজো আমার জীবনে কোন উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি।
হয়ে গেলাম আমি বেকার।
ঘরের টুকটাক কাজ ছাড়া আমার আর কোন কাজ ছিলনা।
খেলা দুলাতে মোটা মুটি আগ্রহ থাকা সত্তেও যেতাম না।
কারন মায়ের বারণ। গরিবের ছেলের খেলাদোলা করতে নেই।
মাঝে মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে খেলতে যেতাম।
সন্ধ্যা বেলা ঘরে ফিরতেই মা বেপক প্রহার করতেন।
মায়ের প্রহার গুলুই আজ আমার শৈশবের প্রধান স্মৃত্বি।
তার পর খেলাদোলা একেবারেই ছেড়ে দিলাম।
শুরু হলো আমার পড়ার প্রতি আগ্রহ।
মুড়ির টোঙ্গা থেকে শুরু করে রাস্তায় কুরিয়ে পাওয়া কাগজ, পত্রিকার ছেড়া অংশ
বাসায় এনে পড়তাম।
মাঝে মাঝে মুদির দোকানের টোঙ্গা বাঁধার পুরাতন বই খুজে নিয়ে এসেও পরতাম।
আবার ফেরত দিয়ে আরেকটা আনতাম পড়ার জন্য।
তখন লাইব্রেরী কি জানতাম না।
শুধু জানতাম লাইব্রেরীতে বই কলম খাতা বিক্রি হয়।
পড়ার ফাকে ফাকে কুড়িয়ে আনা কাগজ গুলির সাদা অংশে মনের ইচ্ছে মতো লিখতাম।
কেউ দেখে ফেললে লজ্জা পেয়ে ছিড়ে ফেলে দিতাম।
সেই থেকেই শুরু পড়ার পাশা পাশি লেখার আগ্রহ।
এক সময় আমি কর্মমুখী হলাম।
মোটামোটি নিজের খরচ চালিয়ে মাকেও আর্থিক ভাবে সামান্য হেল্প করতে পারতাম।
আর অবসরে পুরাতন বইর দোকান থেকে পুরাতন বই কিনে পড়তাম।
পুরাতন বইর দাম কম বল অনেক গুলি এক সাথে কিনে ফেলতে পারতাম।
আর নতুন ডাইরি নোট পেড কিনে লিখতাম।
তখন আমার লেখার পাঠক সংখ্যা ছিল একজন।
আর সে আর কেউ নয় আমি নিজেই।
বন্ধুরা মাঝে মাঝে পড়তো। কিন্তু যতোটা প্রশংসা করতো না তার চেয়ে বেশি
টিটকারি মারত। এই ভাবে অপমানিত হয়ে এক সময় হারালাম লেখা লেখির ভাষা।
লিখতে আর ভালো লাগতো না। তাই পড়াতেও মন বসতো।
পাঠকহীন লেখক কি আর লেখা লেখিতে এগিয়ে যেতে পারে।
এই অতি নগন্য অযোগ্য লেখকের লেখা কি পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে ছাপাবে।
প্রশ্নই আসে না।
এটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নেও সম্ভব না।
তাই আর লেখা লেখি করা হলো না।
মৃত্যু গঠলো আমার লেখক ও পাঠক মনের।
অনেক দিন পড় আমি ফেইসবুক ইউস জানলাম।
তখন ফেইসবুকে চ্যাট অপশনটা ছিলনা।
বাংলা লেখাও যেতনা।
ইংলিশ ফ্রন্টে বাংলা উচ্চারণ দিয়ে ছোট ছোট স্ট্যাটাস দিয়ে আবার লেখা শুরু করলাম।
নতুক করে আবার পাঠক হয়ে গেলাম।
লাইক কমেন্ট শেয়ার দিয়ে শুরু করলাম নতুন এক জগত।
মানে ইন্টারনেট জগত।
তখন কিন্তু শিক্ষিতরাও এই জগতে তেমন একটা পা বাড়াননি।
মোটামোটি পড়তে লিখতে ভালই লাগতো। লাইক কমেন্ড দেখে ভাবতাম
এই বুঝি আমার পাঠক সংখ্যা এক এর অধিক ছাড়িয়ে গেল।
আমার ভুলটা তখনি ভাংলো যখন দেখলাম আমার ইন বক্সে ,কমেন্ট বক্সে
একটাই ম্যাসাজ আসে।
আর তা হলো আমি লাইক কমেন্ট দিলাম আপনি ও আমারটায় লাইক কমেন্ট দেন।
আমার বুঝতে বাকী রইলো না যে এরা আমার লেখার পাঠক না।
তারা শুধু লাইককারী কমেন্টকারী। এরা লাইকের বিনিময়ে লাইক চায়
কমেন্ট এর বিনিময়ে কমেন্ট।
আমি আবার হতাসা ভোগী হলাম।
তাই গুগলে খুজতে লাগলাম এমন একটা লেখার প্লাটফ্রম যেখানে
আমি লিখতে পারবো পড়তে পারবো,সত্যিকারের পাঠক পাবো আর
কুড়াতে পারবো সত্যিকারের প্রশংসা। যা দেবে আমায় লেখার পেরণা।
অনেক দিন খোজার পরেও আমি এমন কোন প্লাটফ্রম খুজে পেলাম না।
গত বৎসর "৫ম বাংলা ব্লগ দিবস" এর নামে একটা পোষ্ট আমার
ফেইসবুক টাইমলাইনে দেখতে পেলাম। পোষ্টের নিচে একটা লিংক পেলাম।
লিংকটা নিউ টেব এ ওপেন করলাম।
পুরাটা পোষ্ট পড়লাম। পড়ার পর কমেন্ট করতে গেলাম।
আমায় ইনফরমেশন দিল যে আমার লগইন করা লাগবে।
তাই আর কমেন্ট করা হলো না।
ওয়েব লিংকটা বুকমার্ক করে রেখে দিলাম। যানিনা কেন জানি সেদিন কেন
এই সাইটটা আমার ভাল লেগেছিল।
সাইটটার নাম আর কিছু না আমাদের "সামওয়ার ইন ব্লগ ডট নেট।
এর পর থেকে আমি প্রতিদিন সামওয়ারে ডুকে পোস্ট পড়া শুরু করে দিলাম।
প্রায় দুই মাস শুধু পাঠক রুপেই ছিলাম সামুর সাথে।
সামুকে মোটামোটি জানলাম বুঝলাম এবং ধারনা নিলাম।
১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪তে নুর ইসলাম রফিক নামে একটা একাউন্ট করে ফেললাম।
১০ মাস ২ সপ্তাহ পর্যন্ত পোস্ট ৬৭টি করেছি,মন্তব্য করেছি ৪৯৭টি,
প্রশংসা পেয়েছি ১৭৬টি, আর পাঠক পেয়েছি ৪৪৭৩ জন।
যা আমার কল্পরার সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে।
তাই সামুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারলাম না।
সামু ভাল থাকুক, ভাল থাকুক সামুর পাঠক লেখক ও বাংলা ব্লগ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন