শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৪

ঘৃণা হচ্ছিলো ঐ বন্দুর উপর

আমি আমার এক মেয়ে বন্ধুকে কাল চ্যাটে প্রশ্ন করেছিলাম
শপিং করেছ?
সে উত্তর দিল, আমি একটা জামা কিনেছি ১,৪০,৫০০।
আমি প্রশ্ন করলাম সংখ্যাটা কিসের?

সে বললো বুজিনি?
আমি বললাম, ১,৪০,৫০০ এইটা কি?
ও বলল, টাকা।
আমি বললাম, এতো টাকা?
ও বলল, আমি ভাই বোনের ছোট তাই।
আমি বললাম, তাই বলে এতো টাকা?
ও বলল, হ্যা তাই।
আমি বললাম, আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি।
ও বলল, কেন এতো অবাক হচ্ছ?
আমি বললাম তুমি আবার টাকার অংকটা বলতো?
ও বলল, কেন ১,৪০,৫০০।
আমি বললাম, it's ok.
ও আমাকে প্রশ্ন করল, তুমি শপিং করেছ?
আমি বললাম, আরে না, গতো ঈদেও না।
এখানেই আমাদের আলাপের সমাপ্তি ঘটে।
তার পর আমি লগ আউট হয়ে ভাবতে থাকি
১,৪০,৫০০ টাকা মাত্র এক জনের জামার দাম।
ভাবতে ভাবতে আমি একটি মার্কেটে গেলাম।
একটা পাঞ্জাবি দেখে আমার অনেক পছন্দ হলো।
পাঞ্জাবির গলায় ২,৫০০ টাকা লিখা একটা তাবিজ
ঝুলানু ছিল।
কিন্তু আমার মানিব্যাগে মাত্র ৪৬০ টাকা আছে।
রাত ১.৩০ মিনিটে রাজ পথে হাটছি
আর ভাবছি আমার এক বন্ধু ১,৪০,৫০০টাকার জামা কিনেছে?
আর আমি মাত্র ২,৫০০ টাকা দিয়ে একটা পাঞ্জাবি
কিনতে পারলাম না?
২,০৪০ টাকার সট পরে গেলো।
নিজেকে খুব খুবই নগণ্য ভাবতে লাগলাম।
ঘৃণা হচ্ছিল নিজের উপর।
মেনে নিতে পারছিলাম না আমার সাথে
বিধাতার এমন নিষ্টুরতা।
হটাত একটা নয় দশ বছরের বাচ্চা
অশ্রু সজল চোখে,কান্না জরিত কন্ঠে
আমার সামনে এসে বলল,
ভাত খাব মামা কয়টা টাকা দেন?
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
আমার বন্ধু ১,৪০,৫০০ টাকার
জামা কিনেছে।
আমি ২,০৪০ টাকার জন্য
পছন্দের পাঞ্জাবিটা কিনতে পারলাম না।
আর এই ছোট্ট অবুঝ শিশুটি রাত দুইটার
সময় ২০ টাকার জন্য অন্তত এক বেলা
সামান্য কয়টা ভাত খেতে পারছে না।
এ কেমন বিধাতার নিষ্টুরতা?
যাই হোক আমি ২০ টাকা তার হাতে দিয়ে
তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলাম।
সে আমাকে এমন সুন্দর একটা হাসি উপহার
দিয়ে দৌড় দিল।
যা সুরঞ্জনাও আমায় দিতে পারেনি কোন দিন?
এখন আর আমাকে আমার ঘৃনা হচ্ছে না।
বরং নিজেকে অহংকারী মনে হচ্ছে,
অন্তত এক বেলা একজন মানুষের
খুদা নিবারণ করতে পেরেছি।
আর ঘৃণা হচ্ছিলো ঐ বন্দুর উপর
যে, ১,৪০,৫০০ টাকায় শুধু নিজের ঈদের জামাই
কিনেছে।

কোন মন্তব্য নেই: