রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

প্রেমিক মাতাল আর বেঁচে নেই


সুরঞ্জনা তুমি কি ছিনতে পারছনা আমায়?
সুরঞ্জনা মুখের ইশারায় না উত্তর দিল।
তোমার মনে নেই আমাকে? আমি সেই যার হাত ধরে তুমি পালাতে চেয়েছিলে একদিন।
তোমার মনে নেই আমাকে? আমি সে যাকে তুমি ভালবেসে ছিলে তোমার চাইতে বেশী।
সে আবার মুখের ইশারায় না উত্তর করলো।
কি এখনো মনে পরছেনা? এখনো মনে পড়ছে না আমাকে তোমার?
অহ বুজেছি তুমি ইচ্ছে করেই আমাকে না চেনার ভান করছ।
সে আবারো ইশারায় না করলো।
কি ভান করছ না তুমি। তবে কি সত্যি আমাকে ভুলে গেছ?
একেবারেই ভুলে গেছ?

এবার আর সে কোন ইশারা করলো না।
নিরব হয়ে বসে রইলো ঘাসের উপরে।

আচ্ছা দাড়াও তোমাকে মনে করিয়ে দেই।
সামনে একটা বিশেষ দিন আসছে বলো তো কি?
জি প্রহেলা বৈশাখ।
হ্যা ঠিক বলেছো  প্রহেলা বৈশাখ।
তুমি নারায়ণগঞ্জের পাগলা বাজার চিন?
জানী তো চিনো তবুও জিজ্ঞাস করলাম।

আজ তোমাকে খুব অল্প সময়ে প্রহেলা বৈশাখের পাগলা বাজারের একটা গল্প শুনাবো।
শুনবে তো?
সে মুখের ইশারায় হ্যা সুচক উত্তর করলো।
ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।
তো শুরু করা যাক-
আবারো মুখের ইশারায় হ্যা সুচক উত্তর করলো।
পাগলা বাজারের একটু সামনে মেরী অ্যান্ডারসন পার্কটা নিশ্চয়ই অচেনা নয় তোমার।
এক প্রেমিক যুগল প্রতি প্রহেলা বৈশাখে শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে মেরী অ্যান্ডারসন এর অপাশে অর্থাৎ নদীর অপারে চলে যেত। ঐখানে কিন্তু প্রহেলা বৈশাখে গ্রাম্য মেলা বসত। বেশী দিন আগের ঘঠনা না কিন্তু। এই তো ২০০৫ থেকে ২০১০ এর ভিতরের ঘটনা গুলি। তো সেবার ছিলো ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল এর প্রহেলা বৈশাখ।
প্রেমিক যুগল প্রতিবারের নেয় সেবারও নদীর ঐ পাড়ে গেল। মেলা আর প্রকৃতির মাঝে ঘুরে ঘুরে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে মেলায় দর্শনার্থী বাড়তে লাগলো।
সাধারণ তো গ্রামের মেলা কিংবা বাজারে সন্ধার পরেই মানুষ জন বেড়ে যায়।
তো মেলাতে মানুষ জন বাড়তে লাগলো।
প্রেমিক যুগল সন্ধ্যা বাড়ছে দেখে নিজ গন্তব্যে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো।
হটাত প্রেমিকের মোবাইলে একটা কল এলো ।
প্রেমিকা প্রেমিকের হাত থেকে হুট করে মোবাইলটা নিয়ে রিসিভড করলো।
অপাশ থেকে হ্যালো শুনতে পেল প্রেমিকা------
প্রেমিকা প্রেমিককে বললো একটা মেয়ে কল করেছে।
প্রেমিক চমকে উঠলো ।
প্রেমিকা হ্যালো'র উত্তর দিলো হ্যালো বলে।
ঐ পাশ থেকে মেয়েটা প্রেমিকের নাম ধরে বললো কেমন আছেন।
প্রেমিকা বললো সে নেই কি বলবেন আমাকে বলুন।
মেয়েটা প্রেমিকাকে বললো তাকে দিন আমি উনার সাথে কথা বলবো।
প্রেমিকা বললো যা বলার আমাকে বলুন উনাকে দেওয়া যাবেনা।
অপাশের মেয়েটা বললো দেখুন আপনাকে আমি চিনিনা। যার মোবাইল তাকে দিন।
প্রেমিকা রাগ করে মোবাইলটা ছুড়ে দিয়ে প্রেমিককে দিল।
প্রেমিক মোবাইল কেছ নিয়ে প্রেমিকের রাগান্নিত চোখ গুলির দিকে তাকিয়ে মোবাইলে হ্যালো বললো-
অপাশ থেকে হ্যালো বলতেই প্রেমিক অট্ট হাসিতে হাসতে লাগলো।
প্রেমিকা প্রেমিকের হাসি দেখে রাগে জ্বলতে লাগলো।
প্রেমিক ইচ্ছে করেই আনন্দ উল্লাস নিয়ে কথা বলতে লাগলো।
প্রেমিকাকে রাগানোর জন্য।
প্রেমিকাও অনেক রাগছিল তখন।

সুরঞ্জনা কথা গুলি চোখ বুজে শুনছে। একবারো কোন কথা বলেনি।
মুখের ইশারায় হ্যা না উত্তর করছিলো এতক্ষন।
হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো-  প্রেমিক অন্য মেয়ের সাথে অনন্দ উল্লাসে মোবাইলে কথা বলা দেখে প্রেমিকা বিষন রেগে গিয়ে দৌড়ে অনেক মানুষের ভীরে হারিয়ে গেল। প্রেমিক মোবাইলে লাইন কেটে দিয়ে প্রেমিকার পিছু দৌড়েও প্রেমিকা দেখতে পারলোনা। কোথায় যেন হারিয়ে গেল প্রেমিকা। শত শত মানুষের ভীরে প্রেমিক তার প্রেমিকাকে খুজে পেলনা। তখন কিন্তু প্রেমিকার মোবাইল ছিলনা যে প্রেমিক প্রেমিকাকে কল দিয়ে খুজে নেবে।

সন্ধ্যা চলে গিয়ে রাতের আধার নেমে আসছে। তবুও প্রেমিক প্রেমিকাকে খুজে পেলনা।
প্রেমিকের চোখ জলে ছলছল। চোখের কোণে জল ঘরিয়ে পরছে। ডান হাতের তালু দিয়ে মুছে নিচ্ছে। আর পাগলের মতো প্রেমিকাকে খুজছে।
প্রেমিক ভেবেছিল প্রেমিকা অতিরিক্ত রেগে গিয়ে নদীতে ঝাপ দিয়েছে। তাই তাকে সে খুজে পাচ্ছেনা। আবার ভাবলো না ঝাপ দেয়নি ঝাপ দিলে শত শত মানুষের চোখ এড়াতে পারতো না। কেউ না কেউ দেখতো। চিল্লার চ্যাঁচামেচি করতো। আবার ভাবলো এই ভীড়ের মাঝে না, হয়তো ঐ নিরব জায়গায় গিয়ে ঝাপ দিয়েছে। তাই কেউ দেখতে পায়নি। তখন প্রেমিক ঐ নীরব জায়গায় গিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাদতে কাদতে তার প্রেমিকার নাম ধরে ডাকতে লাগলো। সুরঞ্জনা তুমি কোথায়? সুরঞ্জনা তুমি কোথায়? আমি তোমাকে খুজে পাচ্ছিনা। সুরঞ্জনা তুমি ফিরে এসো। আমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি। ও মেয়ে ছিলোনা। বিশ্বাস করো ও মেয়ে ছিলনা। ও ছেলে ছিল। ওর কন্ঠটা একেবারেই মেয়ের মতো। সুরঞ্জনা তুমি বিশ্বাস করো।
হটাত প্রেমিকের কাদের উপর হাত পরলো। প্রেমিক চমকে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সুরঞ্জনা তার পিচনে। সে সুরঞ্জনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলতে লাগলো সুরঞ্জনা তুমি আমাকে ফেলে কোথায় চলে গিয়েছিলে। তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে।
তখন শত শত মানুষ আমাদের গিরে জমাট হয়ে গিয়েছিল। প্রেমিকা অর্থাৎ আমি লজ্বা পেয়ে আমাকে তোমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের ইশারায় মানুষের জটলা দেখালাম। তুমি চারদিকে তাকিয়ে লজ্বা পেয়ে চোখের জল মুছে আমার হাত ধরে নদীর ঘাটে চলে এলে। আমরা চলে এলাম আমাদের গন্তব্যে।

তার দু বছর পর আমাদের খুব জগরা হয়। যদিও দোষটা আমারি বেশী ছিল। তারপর আমাদের সম্পর্কের ইতি ঘটতে শুরু হলো। ২০১০ সালের রোজা ঈদের পরের দিন আমাদের জীবনের শেষ দেখা হয়েছিল। সেদিন আমি তোমার সাথে যে আচরন করেছিলাম জানী তা তুমি মেনে নিতে পারনি। আমি তখনো জানতাম কিন্তু তুমি যে আমার এমন আচরন মেনে নিতে পারবেনা। তবুও করেছিলাম।

সেই দেখাটাই আমাদের জীবনের শেষ দেখা ছিল। আর কভু আমাদের দেখা হয়নি কথা হয়নি। তবে তুমি আমার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ করেছিলে। সেটা ছিল তোমার সর্বশেষ ম্যাসেজ। ম্যাসেজটায় লিখেছিলে তোমাকে শেষ দেখা না দেখে আমি মরবোনা। এবং কি তোমাকে শেষ দেখা দেখে আমি আর বাচবোনাও না। আমি তোমার ম্যসেজের কোন উত্তর করিনি তখন।

তার কিছুদিন পরেই আমি রোড এক্সিডেন্ট করি। তিন দিন পর আমার জ্ঞান আসে।
জ্ঞান আসার পর আমি আর আমার জীবনের কোন স্মৃতি মনে করতে পারিনি।
বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ভুলে থাকিনি।
কথা গুলি বলতে বলে সুরঞ্জনা তার চোখের জল মুছছে।

ডাক্তার আমায় বলেছিলেন আমি যেন আমার স্মৃতি বিজরিত জায়গা গুলিতে মাঝে মাঝে ঘুরতে যাই। কিন্তু আমি কোন ক্রমেই আমার স্মৃতি বিজরিত জায়গা গুলির কথা মনে করতে পারিনি। এবং কি কেউ আমাকে মনে করিয়েও দিতে পারেনি। কারন আমার স্মৃতি বিজরিত জায়গা গুলি শুধু তুমি আমি জানতাম আর কেউ জানতোনা। কারন তুমি আমাকে বলতে আমার সাথে আর কেউ যেন না আসে। বলো বলতে না তখন। কি হলো বলছো না কেন? উত্তর দাও?

এই প্রথম সুরঞ্জনা চোখ খুললো প্রেমিক মাতাল এর কোন উত্তর না পেয়ে।
সুরঞ্জনা তাকিয়ে দেখে প্রেমিক মাতাল মাটিতে পড়ে আছে। ডান হাতটা তার দিক দিয়ে। হাতের মুটোয় একটা ছোট্ট চিরকুট। সুরঞ্জনা খুব স্বাভাবিক ভাবেই কোন বিচলিত না হয়েই প্রেমিক মাতালের চিরকুটটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলো। আর আপন মনে পড়তে লাগলো।
"তোমাকে শেষ দেখা না দেখে আমি মরবোনা। এবং কি তোমাকে শেষ দেখা দেখে আমি আর বাচবোনাও না। ভাল থাক সুরঞ্জনা স্বামী সন্তান নিয়ে ভাল থাকো"।

সুরঞ্জনা বুজে গেছে প্রেমিক মাতাল আর বেঁচে নেই চলে গেছে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।
সুরঞ্জনার চোখ দিয়ে এখন আর এক ফোটা জল ঝরছেনা। নিরব শক্ত হয়ে পাথরের মতো বসে আছে।
দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রেমিক মাতাল এর মতো প্রানহীন দেহ।
তারপর থেকে সুরঞ্জনা আর কোন দিন কথা বলতে পারেনি। হারিয়ে ফেলেছিল চিরতরে তার বাকশক্তি।

কোন মন্তব্য নেই: