শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৪

খয়ারি পাঞ্জাবী


শ্রাবন্তি মেয়েটা দেখতে অনেক মিষ্টি,
গায়ের রংটা শ্যামা বরণ।
তার হাসিটা মেঘে ডাকা চাদের মতো।
খুব চঞ্চলা মন, চঞ্চল তার চলন বলন।
সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।

ফেইস বুকে তার সাথে পরিচয় হয় নীড় এর।

নীড় ছেলেটা খুব গম্বির স্বভাবের।
খুব একটা হাসে না,
খুব অল্প কথা বলে,
কথা বলার গতিও খুব কম।
গম্বির স্বভাবের মানুশ যেমনটা হয় আর কি?
সেও তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।

একদিন শ্রাবন্তি নীড় কে ফেইস বুকে বললো,তোমার নাম্বারটা দেবে?
নীড় কোন কিছু না ভেবেই নাম্বারটা দিয়ে দিল শ্রাবন্তিকে।
শ্রাবন্তি বললো ঠিক আছে রাতে মোবাইলে কথা হবে,এখন বায়।

এখন প্রতি রাতেই শ্রাবন্তি আর নীড়ের ফোনে কথা হয়।
শ্রাবন্তির চঞ্চলতাটা আরো বেড়ে গেলো।
নীড় সেই আগের মতোই গম্ভির রয়ে গেলো।

শ্রাবন্তি একদিন নীড়কে বললো চলো আমরা দেখা করি?
নীড় বললো কিন্তু কেন?
শ্রাবন্তি বললো তুমি বোকা নাকি? কিচ্ছু বুজনা।
নীড় বললো হয়তো আমি বোকাই। তা কোথায় দেখা করবে?
শ্রাবন্তি বললো তুমিই বলো?
নীড় অনাগ্রহ ভাবে বললো আমি জানিনা তুমি বলো?
শ্রাবন্তি বললো আচ্ছা তাহলে তুমি কাল সকাল ১০টায়
বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেইটে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
নীড় বললো হে আসবো,তবে একটু দেরি হতে পারে।
শ্রাবন্তি বললো এটা কোন বেপার না।
নীড় বললো ওকে।
শ্রাবন্তি বললো বায়।

শ্রাবন্তি রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে ভাবছে,
কোন ড্রেসটা কাল পড়বে?
নীড় মনে হয়  তার প্রিয় খয়েরি রঙের সর্ট পাঞ্জাবিটাই পরে আসবে কাল?
তাহলে আমিও আমার সেই বিরক্ত লাগা খয়েরি ড্রেসটাই পড়বো।
আচ্ছা আমি কি করে নীড়কে আমার মনের কথা বললো?
ও যদি আমায় ফিরিয়ে দেয়, ও যদি আমায় বুঝতে না পারে।
আমার গায়ের রং শ্যামলা বলে ও যদি আমাকে অপন্দ করে?
দূর কি যা তা  ভাবছি, নীড় এ রকম ছেলেই না।
ও ঠিকি আমার ভালবাসা গ্রহন করবে।
ভাবতে ভাবতে শ্রাবন্তি এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

খুব ভোরেই শ্রাবন্তির ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মোবাইলের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ০৫.১০ মিনিট মাত্র।
তাই আরো কিছুক্ষন ঘুমানোর চেষ্টা করেও বিফল হলো।
ঘুম তাকে একবারের জন্যও আপন করে নিলো না।
ব্যর্থ হয়ে উঠে পড়ে ফ্রেস হয়ে নীড়কে ফোন দিলো।
.....................হ্যালো
ওপাশ থেকে নীড় বললো হ্যালো গুড মর্নিং
শ্রাবন্তি ও নীড়কে গুড মর্নিং বলে বললো ঘুম থেকে উঠলে কখন?
নীড় বললো ঘুমালেই তো উঠবো। দু-চোখে তো ঘুমই আসেনি?
শ্রাবন্তি বললো কেন আমায় ভেবে নাকি?
নীড় হ্যা অনেকটা এরকমি।
শ্রাবন্তি বললো তা তুমি কি পড়ে আসবে, নিশ্চয়ই তোমার সেই প্রিয়
খয়েরি রং এর সর্ট পাঞ্জাবি?
নীড় বললো হ্যা তোমার আইডিয়া সঠিক।
শ্রাবন্তি নিজ থেকেই বললো হ্যা আমিও খয়েরি রং এর ড্রেসটা পরবো।
৯টা বেজে গেছে তারাতারি তৈরি হয়ে নাও।
নীড় বললো আমি রেডি আছি তুমি?
শ্রাবন্তি বললো আর আমি এখনও আনরেডি। আচ্ছা রাখি হে তুমি তারাতারি চলে এসো।
আমি অপেক্ষায় থাকবো।
নীড় বললো  ওকে বায়।
শ্রাবন্তি ও, ওকে বায় বলে লাইন কেটে দিলো।

শ্রাবন্তি অনেক গুলি ড্রেস তার ওয়াড্রপ থেকে বের করলো।
তার মধ্য থেকে খয়েরি রং এর ড্রেসটা খুজে বের করলো।
ড্রেসটা হাতে নিতেই শ্রাবন্তির গা'টা কেমন  জানি করে করে উঠলো।
খুব বিরক্ত লাগছে তার, তাই সিদ্ধান্ত নিলো এই ড্রেসটা সে পরবে না।

অনেক গুলি ড্রেস পড়ে আবার চেঞ্জ করে ফেলেছে।
কোনটাই তাকে সস্তি দিতে পারছে না।
তাই হাজার বিরক্ত লাগা সত্ত্বেও শ্রাবন্তি সেই খয়েরি রং এর ড্রেসটাই পড়লো।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে চোখ পড়তেই শ্রাবন্তি স্থব্দ হয়ে গেলো।
নীজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না যে, তার সব চেয়ে বিরক্ত লাগা ড্রেসটাতেই
আজ তাকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে। তার মনের সস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।
শ্রাবন্তি আনন্দে চিৎকার করে লাফাতে লাগলো।
শ্রাবন্তির মা দৌড়ে এলেন, কি হয়েছে কি হয়েছে বলে
রুমে ঢুকতেই শ্রাবন্তি লাফ দিয়ে মায়ের গলা জরিয়ে ধরে বললো,
আই এম বেষ্ট হেপি মা, আই এম বেষ্ট হেপি।
শ্রাবন্তির মা বললেন, তো এতো আনন্দের কারনটা কি সেটা তো বলবি তো?
শ্রাবন্তি বললো মা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, এসে বলছি তোমায়।

শ্রাবন্তি তার মায়ের গালে চুমু দিলো। তার মাও তার কপালে লক্ষ্মী চুমু দিয়ে বললেন,
সাবধানে যাস কিন্তু।
শ্রাবন্তি বললো ঠিক আছে মা। বলেই আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে গেলো।

একটা সি এন জি নিলো বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশ্যে।
শ্রাবন্তি চেহারার মধ্যে এক অচেনা আনন্দের ছাপ।
একা একাই শ্রাবন্তি হাসছে। এই হাসিই তার আনন্দের প্রকাশ।
সি এন জির সামনের লুকিং গ্লাসে বার নিজের চেহারাটা দেখছে।
কপালে কয়েক ফোটা গাম জমে আছে।
ওড়নার আচল দিয়ে তা মুছে নিলো।
মিরপুর ১নাম্বারে এসেই জ্যামে আটকা পড়লো সি ন জি।
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০.০৬ মিনিট।
০৬ মিনিট এমনিতেই লেট। এই জ্যামে আবার কয় মিনিট যাবে খুদাই জানেন।
তাই হেন্ডব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে নিয়ে ডায়াল লিষ্ট থেকে
প্রথম নাম্বারটাতেই অর্থাৎ নীড় এর নাম্বারে কল দিলো।
নীড় কল রিসিভড করতেই শ্রাবন্তি হ্যালো বলেই, বললো আমি প্রায় চলে এসেছি।
তুমি চলে এসো।
নীড় বললো আমি আসবো মানে?
শুনা মাত্রই শ্রাবন্তির মুখ গলা শুখিয়ে গেল।
এক গুচ্ছ মেঘ এসে শ্রাবন্তির মনের সেই সুখটাকে আড়াল করে দিলো।
পরক্ষনেই নীড় বলে উঠলো, আমি ৪০মিনিট আগেই এসে বসে আছি।
শ্রাবন্তির মুখটা আবার হাসি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
কোথায় হাঁড়িয়ে গেলো মনে জমা মেঘ গুলো।
জ্যাম ছুটে গেলো। সি এন জি আবার ছুটছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদ্দেশে।
শ্রাবন্তি বললো আচ্ছা ১০ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
নীড় বললো ওকে।
শ্রাবন্তি ও ওকে বায় বলে লাইন কেটে দিলো।

১০ মিনিটের ভিতরেই সি এন জি থামলো বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেইটে।
শ্রাবন্তি সি এন জির ভাড়া মিটিয়ে খয়েরি রং এর সর্ট পাঞ্জাবি খুজতে লাগলো।
একজন কে দেখতে পেলো খয়েরি রং এর পাঞ্জাবি পড়া।
ছেলেটি অন্য পাশে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবন্তি সামনে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির পিঠে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে হালকা দাক্কা
দিতেই ছেলেটি ঘুরে দাড়ালো।
শ্রাবন্তি তর্জনী আঙ্গুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে ছেলেটির নাকের ডগার প্রায় কাছে নিয়ে বললো,
i'm sure you are nir.
ছেলেটি হুট করে বলে দিল sorry আমি সে নই। i'm hamid reza.
শ্রাবন্তি লজ্জা পেয়ে হুট করে তার তর্জনী আঙ্গুল পিছনে লুকিয়ে নিয়ে ছেলেটির
উদ্দেশ্যে বললো i'm sorry.
ছেলেটি বললো is ok.
শ্রাবন্তি লাজুক হাসি দিয়ে ওকে বায় বলে একটু দূরে চলে গেলো।

এবার আর কোন কিছু না ভেবেই নীড় কে কল দিলো।
ওপাশ থেকে নীড় কল রিসিভড করলো।
হ্যালো নীড় তুমি কোথায়? আমি দাঁড়িয়ে আছি তো।
নীড় ওপাশ থেকে বললো, তুমি সিঁড়ির উপরে উঠে আসো।
শ্রাবন্তি কথা বলতে বলতে সিঁড়ির উপড়ে উঠে নীড় কে বলতে লাগলো
নীড় তোমাকে তো আমি দেখতে পারছি না।
নীড় বললো হে আমি তোমাকে দেখতে পারছি। তুমি মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে
আমায় খুজছো।
শ্রাবন্তি বললো হে তাইতো।
নীড় বললো তুমি তোমার ডান পাশে নিচের দিকে তাকাও।
শ্রাবন্তি তার ডান পাশে ঘুরে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো
নীড় তার সেই প্রিয় খয়ারি পাঞ্জাবিটা পড়ে একটা হুইল চেয়ারে বসে আছে।
নীড়ের পা দুটি হাঁটুর নিচ পযর্ন্ত নেই।
হুইল চেয়ারের পিচনের হ্যান্ডলে ধরে আছেন এক মধ্য বয়সি লোক।
সাথে সাথে শ্রাবন্তির হাত থেকে মোবাইলটি সিঁড়িতে পড়ে গেলো।
শ্রাবন্তিও জ্ঞান হাঁড়িয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পরলো।

মনে পড়ে মন পুড়ে (১ম পর্ব )

রাতের আঁধারের নন্দিনী (১ম পর্ব)

কোন মন্তব্য নেই: