শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বগুড়া শহর পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল। ৩ দিন ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধের পর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে পরবর্তী সময়ে শহরের ফুলবাড়ীতে ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন স্মৃতিস্তম্ভ ‘মুক্তির ফুলবাড়ী’।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোরে মিত্রবাহিনীর ৬৪ রেজিমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহ এক ব্রিগেড সৈন্য নিয়ে শহরের ৩ কিলোমিটার দূরে শহরের উত্তরে নওদাপাড়া, চাঁদপুর ও ঠেঙ্গামারা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান লাঠিগাড়ী পাথার সংলগ্ন বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে ছিল ৯ জন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা। মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি ডিভিশন সেখানে পরিখা (বাংকার) খনন করে। মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি ডিভিশন লাঠিগাড়ী গ্রামে ধু-ধু ক্ষেত-খামারে অবস্থান নেয় এবং বগুড়া শহরে অভিযান পরিচালনার জন্য ফ্রন্ট ফাইটার গুর্খা বাহিনীর সৈন্যরা ট্যাংক নিয়ে শহর অভিমুখে এবং করতোয়া নদী পার হয়ে পূর্ব দিকে দু’দলে বিভক্ত হয়ে রওনা দেয়। এ সময় আশপাশের গ্রামে বেশকিছু সংখ্যক যুবক স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে মিত্রবাহিনীর সঙ্গে শহর অভিমুখে আসতে থাকে। শাখারিয়া গ্রামের একরাম হোসেনের হাতেই ছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। মিত্রবাহিনী শহরতলীর ফুলবাড়ী এলাকার এতিমখানার কাছে পৌঁছলে ওঁেপতে থাকা পাকহানাদার বাহিনী আকস্মিকভাবে তাদের ওপর হামলা করে। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর কয়েকজন সৈন্য নিহত হন। পতাকাবাহী যুবকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তুমুল লড়াই বাধে উভয়পক্ষের মধ্যে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই মিত্র বাহিনীর বিমান এসে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। জঙ্গি বিমানগুলো পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর বোমা হামলা করে। এভাবে ১০, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর তুমুল যুদ্ধ হয়। ১৩ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা দুটার দিকে পাকহানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে বলে সংবাদ পাওয়া গেলে মিত্রবাহিনীর শিবিরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। বেলা আনুমান ৩টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এলাহী বক্স ৫-৭শ’ সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে শহরের বৃন্দাবনপাড়ার সুলতান সাহেবের বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় এসে মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংহের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরাজিত হানাদার বাহিনী বগুড়া শহরের আটাপাড়ায় অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবনে মিত্রবাহিনীর হেফাজতে অবস্থন গ্রহণ করে। এদিনই বগুড়া শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে বিজয়ের ৩২ বছর পর ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ শহরের জয়পুরপাড়া (ফুলবাড়ী) সরকারি শিশু পরিবার চত্বরে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তির ফুলবাড়ী স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আর ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ‘মুক্তির ফুলবাড়ী’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন।
এদিকে একই দিনে বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা পাকহানাদার শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই পাকবাহিনী কাহালুতে আত্মসমর্পণ করে। ওই দিন সকাল ৯টায় মেজর জাকি, ব্রিগেডিয়ার তোজাম্মেল, মোফাজ্জলসহ বেশ কয়েকজন পাকবাহিনী কাহালুর রেলগেট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারে কাছে আত্মসমর্পণ করেন। 
এদিকে ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নন্দীগ্রামের দলগাছা গ্রামে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের কাজ শুরু করেন। ১২ ডিসেম্বর রনবাঘা ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধাদের যুদ্ধ শুরু হয়। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান এবং একই দিন থানা অতিক্রম করার সময় পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম পাকহানাদার মুক্ত হয়।



সংগ্রহঃ-আমার দেশ

  1. আমরা সবাই মিলে Facebook এর নতুন রেকর্ড করব
  2. ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ - New!
  3. ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ New!
  4. ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
  5. ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
  6. ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
  7. ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
  8. ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
  9. ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ - New!
  10. ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ - New!


কোন মন্তব্য নেই: