রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

দোয়া করবেন এমন গালি যেন দিন দিন আরো বৃদ্ধি পায়


প্রতিদিনের মতো রাতে পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছি। ফুটপাতে ১০ -৩০ টাকার মধ্যে শীতের কাপড় বিক্রী হচ্ছে। প্রতিদিনই ঐ দিকে আমি উঁকি দিয়ে যাই। কেন প্রতিদিন উঁকি দেই সেটা না হয় পরে বলি।আগে গত কালের একটা ঘঠনা বলি। তো কাপড়ের দোকান গুলিতে দেখলাম কোন ক্রেতা নেই। কারন শীতটা খুব কম। তারপর আবার প্রতিদিন এই অল্পদামে শীতের কাপড় বিক্রী হয় বলে প্রায় সবাই শীতের কাপড় কিনে নিয়েছেন।
তাই আর এসব দোকানে এখন আর ক্রেতার তেমন ভীড় পরেনা। যাই হোক গতকাল উঁকি দিয়ে দেখি একজন বৃদ্ধা মহিলা একটা শীতের কাপড় কিনে নিয়ে দোকানি বাচ্চা ছেলেটাকে এক টাকার ৫ টা কয়েন দিচ্ছেন। ছেলেটা টাকা নিচ্ছেনা।কারণ জামাটার দাম ৩০ টাকা। আমি বৃদ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে চিনতে পারলাম। সে একজন ভিক্ষুক। সেও আমাকে চিনতে পারলো। সে রাস্তায় এবং মার্কেটে ভিক্ষা করে। আমি মহিলার সাথে কুশল বিনিময় মূলক কথা বলে তাকে বললাম ছেলেটা এখানে চাকরি করে। তার মালিক রাতে কাপড়ের সংখ্যা গুণে তার থেকে পাই পাই হিসেব করে নেবে। ছেলেটি আমার সাথে তাল মিলিয়ে বললো কম পড়লে আমার আজকের বেতন থেকে কেটে নেবে। বৃদ্ধা মহিলাটি তবুও ছেলেটিকে জোরাজোরি করছিল ৫ টাকায় শীতের জামাটি দিয়ে দিতে। ছেলেটি কোন ক্রমেই দিতে চাচ্ছিলনা। বৃদ্ধা মহিলাটি কাপড় না নিয়ে যাচ্ছিলনা। আমি সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দিলাম। বৃদ্ধা মহিলাটিকে ৫ টাকা তার কাছে রেখে দিয়ে শীতের কাপড়টি নিয়ে চলে যেতে বললাম। মহিলাটি পাওয়ার আনন্দে হাসি মুখে চলে গেল। বাচ্চা ছেলেটি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো। বৃদ্ধাকে আটকানো কিংবা আমাকে কিছু বলার সাহস সে পেলনা। আমি ছেলেটির অসহায়ত্ব ও ভিতরের ক্রুদ রাগ অনুভব করতে করতে ছেলেটিকে বললাম ভিক্ষুক মানুষ ত্রিশ টাকা কি ভাবে দেবে সে তোমাকে। ছেলেটি কোন উত্তর দিলনা। গোপন ক্রুদ আর রাগে জ্বলতে থাকল। আমি পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগের অল্প কিছু টাকা থেকে ত্রিশ টাকা বের করে ছেলেটির হাতে তুলে দিতেই ছেলেটির মুখ দেখে মনে হল ছেলেটি মনে হয় স্বর্গ পেয়ে গেছে হাতে। আমায় তখন উপহার দিল একটা নিখাদ স্বর্গীয় মিষ্টি হাঁসি। বৃদ্ধা মহিলার পাওয়ার আনন্দ আর ছেলেটির স্বর্গীয় হাসি উপহার নিয়ে আমি আবার পায়ে হাটতে লাগলাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। অহে কেন প্রতিদিন ঐখানে উঁকি দেই নিশ্চই বুঝে নিয়েছেন। জি ঠিক ধরেছেন এমন সুযোগ আর উপহার পাওয়ার লোভেই প্রতিদিন ঐ ফুটপাতের শীতের কাপড়ের দোকান গুলিতে উঁকি দেই। দোয়া করবেন লোভটা যেন দিন দিন আরো বৃদ্ধি পায়। এই লোভের জন্যই আমার মা প্রায়ই আমকে গালি দেয় হাতিমতাই বলে। দোয়া করবেন এমন গালি যেন দিন দিন আরো বৃদ্ধি পায়।

কোন মন্তব্য নেই: